তীব্র তাপদাহের বৈশাখ পেরিয়ে শুরু হলো মধু মাস জৈষ্ঠ্যের যাত্রা। আজ পহেলা জৈষ্ঠ্য। রসালো-শাঁসালো রকমারী মধু ফল-ফলাদীতে ভরা মাসটি। গাছে গাছে থোকায়-থোকায় কাঁচা-পাকা আম, লিচু, জাম, জামরুলের দুলনি, মন মাতানো সৌরভ আর রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, গগনচূড়ার বর্ণিল আবির ছড়িয়ে যাত্রা শুরু হলো মধুমাস অর্থাৎ জৈষ্ঠ্যের। মধুমাস হলেও তীব্র তাপদাহে এবার রসালো শাঁসালো ফল ফলাদীর ফলন হয়নি আশানুরূপ। এবার চৈত্র-বৈশাখে খরা প্রচণ্ড দাপট দেখিয়ে ছিল বৃষ্টিহীন। ফলে ঝরে পড়েছে প্রচুর আম লিচু। একদিকে খরা অন্যদিকে বৃষ্টিহীনতা মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে আম, লিচুসহ বিভিন্ন ফলে। প্রচুর আমের গুটি ঝরে পড়েছে। সেচ দিয়েও ঠেকানো যায়নি। পানির অভাবে এবার আম খুব একটা বড় হয়নি। মাঝে খানিকটা বৃষ্টি স্বস্তি দিয়েছে। এরমধ্য দিয়েই বাজারে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে আম, লিচুসহ নানা রসালো ফল।
গ্রীষ্মের খরতাপে রসালো ফল মানুষের মাঝে নিয়ে আসে প্রশান্তি। চৈত্রের পর গ্রীষ্মের খরতাপে মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে চলে আসে তরমুজ, আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ নানা রকম রসালো ফল। চৈত্র-বৈশাখে ফল ধরা শুরু হলেও পরিপূর্ণতা লাভ করে জৈষ্ঠ্যে এসে। ক্ষনিকের অতিথি হিসেবে লিচু আসতে আরো কটাদিন দেরি আছে। আমের মৌসুম শুরু হলেও বনেদি জাতের আম আসতে আর কয়েকদিন সবুর করতে হবে আম প্রেমিদের। এবার আম-লিচুতে আশানুরূপ ফলন নেই। তাপদহের পর আম চাষিরা তাকিয়ে আছেন আবহাওয়ার গতিবিধির দিকে। ঝড়-বৃষ্টি না হলে ফলন মোটামুটি হবে। কারণ শুরুতেই মুকুল কম এসেছে তারপর তাপাদহ। সবকিছু সহ্য করেই গাছে গাছে থাকা আম-লিচু তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। এই রসালো শাঁসালো ফল আর দিন পনেরোর মধ্যে ভোজন রসিকদের মধ্যে চলে আসবে। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে আমের রাজধানী খ্যাত বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে। আমের বাগানের বিস্তুতি ক্রমশই বাড়ছে। নতুন করে নওগাঁয় ধানের জমিতে হাজার হাজার হেক্টরে আম বাগান গড়ে উঠেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাগান বেড়েছে। রাজশাহীতেও নতুন করে এক হাজার হেক্টর আমের আবাদ হচ্ছে। নাটোর ছয় হাজার হেক্টর ছড়িয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় পঁচাশি হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হচ্ছে। এবারো আম বাণিজ্য হবে দশ হাজার কোটি টাকার উপরে। এখানকার আমে অর্থনীতি চাঙ্গা থাকবে মাস চারেকের জন্য। তাছাড়া বিভিন্ন ভাবে এর সাথে যুক্ত থাকবে আমের ব্যাপারী, ট্রাক চালক, ভ্যান চালক, শ্রমিক-কর্মচারীসহ লাখ পাঁচেক মানুষ।
গতকাল আমের বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বাজারে গুটির জাতের আম এসেছে। মানুষ তা কিনছে আচারের জন্য। দামের কারণে কাঁচা ফজলী আমকে টেনে আনা হয়েছে। মধুমাস শুরু হয়েছে বিভিন্ন ধরনের গুটি আম দিয়ে। আর বনেদি জাতের মধ্যে এসেছে গুটি গোপাল। কিছুদিনের মধ্যে চলে আসবে গোপাল, খিরসা পাতি, রানী পছন্দ, মোহনভোগ আর ল্যাংড়া। নামে ল্যাংড়া হলেও এর কদরের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে। এর মাঝে চলে আসবে বিভিন্ন নাম ও স্বাদের আম। এরপর আসবে আমের মহারাজা ফজলী। ইতোমধ্যেই ফজলী ও খিরসাপাতি আম পেয়েছে জিআই সনদ। রংপুরের হাড়িভাঙ্গার কাছে আম রসিকদের সাতক্ষিরার গবিন্দভোগ কোন অংশে কম নয়। দিনাজপুরের নাক ফজলি ও রসগোল্লা সমতুল্ল বেদানা লিচুও কি কম। সারা বছর যাতে আম রসিকের রসনা মেটাতে পারে সেজন্য বারোমাসি আমসহ নতুন নতুন জাতের আমের বাগান হচ্ছে। বছরজুড়েই মিলবে টাটকা আম। এই আম শুধু দেশে নয় এখন, বিদেশে যাওয়া শুরু হয়েছে। রফতানির জন্য ফ্রুট ব্যাগিং করে পরিচর্যা করা হচ্ছে। এর দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি। গত বছর তিন হাজার মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানি হয়েছে। এত প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও এবার পাঁচ হাজার মেট্রিক টন আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানির আশা করছে আম বাগানীরা।
মাইলের পর মাইল জুড়ে লাখ লাখ আম গাছে কোটি কোটি আমের দুলনী ইতোমধ্যে মন কাড়তে শুরু করেছে ভ্রমন পিপাসুদের। বিভিন্ন ট্রাভেল কোম্পানী ম্যাঙ্গো ট্যুরের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তাছাড়া রাজশাহীর যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভাল। রেল, সড়ক, বিমান সব পথেই যাতায়াত করা যাবে। থাকার জন্য হোটেলের ব্যবস্থাও রয়েছে। আম বাগানের মধ্যদিয়ে হেঁটে গেলে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা আম মনে অন্যরকম শান্তি দেয়। আমের বাজারগুলোয় গেলে নানা প্রজাতির আম দেখে চোখ কপালে উঠবে। আম হলো ফলের রাজা। আম শুধু গল্প কবিতায় নয়। বিশ্বজুড়ে আমের জনপ্রিয়তা বৈচিত্রপূর্ণ ব্যবহার, স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিমানের বিবেচনায় এটি আদর্শ ফল। রুপচর্চা ছাড়াও এর রয়েছে ঔষধিগুণ অনেক।