ইসলামি ডেস্ক
মানুষ হিসেবে আমরা দুনিয়ায় কীভাবে জীবনযাপন করব তা উল্লেখ রয়েছে কুরআন মাজিদে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘এ কিতাবে আমি কোনো কিছু বাদ দিইনি।’ সুরা আনআম : ৩৮
কুরআনে কারিমের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনার প্রতি এমন গ্রন্থ নাজিল করেছি, যাতে সব জিনিসের বর্ণনা আছে।’ সুরা নাহল : ৮৯
উল্লিখিত আয়াত ছাড়া কুরআনে কারিমের আরও অনেক আয়াতে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। হাদিসেও রয়েছে এ-সংক্রান্ত আলোচনা। অর্থাৎ কুরআন মাজিদে কোনো কিছুর আলোচনা বাদ যায়নি। আমরা কুরআনের তিলাওয়াত শুনি। সুন্দর তিলাওয়াত আমাদের হৃদয় পুলকিত করে, মন নরম হয়। সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা বেড়ে যায়।
কুরআনে কারিমের আলোচনা শোনা যায় ওয়াজ মাহফিল, তাফসির মাহফিল, সভা, সেমিনার ও জুমার বয়ানে। এ ছাড়া বিভিন্ন ফোরামেও কুরআনের আলোচনা করা হয়। কেউ কেউ পারিবারিকভাবে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসেও কুরআনের ঘটনাবলি ও শিক্ষণীয় বিষয় আলোচনা করেন।
আলেমরা সব সময় বলেন, আসুন কুরআনের শ্রোতা হই। কুরআনের শিক্ষার আলোয় হৃদয় আলোকিত করি। নিজেদের জীবন কুরআনের শিক্ষা দিয়ে সাজাই। মনের সব কালিমা দূর করে ফেলি। এজন্য কুরআন শুনতে হবে শিক্ষার নিয়তে, আমল করার মানসে। তাহলেই আমাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। যাকে বলা হয় ইমানদার শ্রোতা। আল্লাহতায়ালা কুরআন মাজিদে ইমানদার শ্রোতার পরিচয় দিয়েছেন এভাবে, ‘প্রকৃত ইমানদার তো তারাই আল্লাহর কথা স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে, আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয় তাদের ইমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে।’ সুরা আনফাল : ২
আসলেই তো তাই। জাহান্নামের ভয় যার হৃদয়ে গাঁথা; আল্লাহবিরোধী কোনো কাজ করে ফেললে, আল্লাহর আজাবের কথা স্মরণ হলে তার হৃদয় কেঁপে ওঠে। কুরআন মাজিদে মানবীয় ত্রুটিগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাই ইমানদারের সামনে এমন বিষয় এলে তার অন্তর প্রকম্পিত হয়। যখন তার সামনে আল্লাহর কোনো হুকুম আসে এবং সে তার সত্যতা মেনে নিয়ে আনুগত্যের শির নত করে দেয়, তখনই তার ইমান বেড়ে যায়। যখনই আল্লাহর কিতাবে ও তার রাসুল (সা.)-এর হেদায়েতের মধ্যে এমন জিনিস দেখে যা তার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা, চিন্তাভাবনা, মতবাদ, পরিচিত আচার-আচরণ, স্বার্থ, আরাম-আয়েশ, ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব বিরোধী হয় এবং তা মেনে নিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিধান পরিবর্তন করার পরিবর্তে নিজেকে পরিবর্তিত করে ফেলে; তা গ্রহণ করতে গিয়ে কষ্ট স্বীকার করে নেয়; তখন মানুষের ইমান তরতাজা হয়। আল্লাহর অপার অনুগ্রহ ও তাঁর প্রবল শক্তিমত্তার কথা এবং এ-সংক্রান্ত ঘটনাবলি শুনলে তাঁর প্রতি ভরসা বেড়ে যায়। আল্লাহর প্রতি আস্থা মজবুত হয়।
কুরআনে কারিমের শ্রোতাদের জন্য আল্লাহর নির্দেশনা হলো, ‘যখন তোমাদের সামনে কুরআন পড়া হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং নীরব থাকো, আশা করা যায় তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষিত হবে।’ সুরা আরাফ : ২০৪
ইমানদার শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘মুমিনদের কোনো বিষয়ে মীমাংসা করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিধানের দিকে ডাকা হলে তারা বলে আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম, প্রকৃতপক্ষে তারাই সফলকাম।’ সুরা নুর : ৫১
আর শ্রোতাদের জন্য কুরআনের উপদেশ হলো, ‘তোমরা তাদের মতো হোয়ো না, যারা বলে আমরা শুনলাম। অথচ তারা শোনে না।’ সুরা আনফাল : ২১