ইসলামি ডেস্ক
ইসলামি বর্ষপঞ্জির তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল। এটি অন্যান্য মাস থেকে বেশি গুরুত্ব বহন করে। বিশ্বনবী নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই মাসেই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এই মাসেই তিনি ইন্তেকাল করেন।
এ কারণে মুসলমানদের কাছে এই মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। নবীজি (সা.) জন্মগ্রহণের কারণে যেমন এই মাসের ফজিলত বেড়েছে, ঠিক তেমনি ফজিলত বেড়েছে সোমবার দিনেরও।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকাল দিবস কামনা করে, তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ’। (সূরা: আল-আহযাব, আয়াত: ২১)
হাদিস শরীফে এসেছে-
আবূ কাতাদা আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘সোমবারের রোজা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি, আর এই দিনেই আমাকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে (কিংবা তিনি বলেছেন) এই দিনেই আমার ওপর (প্রথম) ওহী নাজিল করা হয়েছে’। (মুসলিম: ১১৬২, আবু দাউদ: ২৪২৬)
এই মাসের আগমনে মুমিনদের অন্তরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা তাজা হয়। তাই রবিউল আওয়াল মাসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বিভিন্ন আয়োজন। আল্লাহর বড় ধরনের কোনো নেয়ামতের স্মরণে আনন্দ প্রকাশ খারাপ জিনিস নয়। তবে এগুলো শরীয়তের গণ্ডির ভেতরে হওয়া আবশ্যক।
বর্তমানে একশ্রেণীর মানুষ এই মাসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রথা, রীতি-নীতি ও শরীয়ত পরিপন্থী কর্ম-কাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বীনের নামে বিদআতে লিপ্ত হচ্ছে। ইসলাম এসব কতটুকু সমর্থন করে সেদিকে তাদের বিন্দুমাত্রও ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ রবিউল আওয়াল মাসকে কেন্দ্র করে বর্তমানে যে আচার অনুষ্ঠান মেতে ওঠেন অনেকে ইসলামী শরীয়তে এসবের কোনো প্রমাণ নেই।
এ সম্পর্কে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমাদের শরীয়তে নেই এমন বিষয় যারা আবিস্কার করে তারা আমাদের দলভুক্ত নয়’। (বুখারি: ২৬৯৭)
রবিউল আওয়াল মাসের আমল:
কোরআন হাদিসে এই মাসের জন্য আলাদা কোনো আমলের বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাই নিজেদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আমলের বর্ণনা দেওয়া শরিয়তে বাড়াবাড়ি এবং হারাম কাজ। তবে নবীজির (সা.) সিরাত আলোচনা করা একটি বড় ইবাদত। এমনকি এটি ঈমানের অংশও বটে।
নবীজির (সা.) জন্মের ঘটনার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো তার জীবনাদর্শের অনুসরণ। জন্মের বিষয়টি একান্তই তার ব্যক্তিগত। কিন্তু তার সিরাত বা জীবনাদর্শ সব যুগের, সব মানুষের জন্য। বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্য। আর নবীপ্রেমের প্রথম শর্ত হলো নবীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন না ঘটলে নবীপ্রেমের দাবি অর্থহীন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম, শৈশব, নবী হিসেবে প্রেরণ, দাওয়াত, জিহাদ, ইবাদত, আখলাক-চরিত্র, নীতি-নৈতিকতা, তাকওয়া-তাহারত, দয়া-ভালোবাসা, রাগ-ক্রোধ, হাসি, উঠা-বসা, হাঁটা, ঘুম-জাগরণসহ যাবতীয় চালচলন ইত্যাদি মুসলিম উম্মাহর সামনে উপস্থাপন করা। এগুলো সামনে রেখে আলোচনা সভার অয়োজন করা, অবশ্যই ভালো এবং প্রশংসনীয় কাজ। রবিউল আওয়াল মাসে ইসলাম সমর্থন করে না এমন কাজে মেতে না ওঠে এগুলো করা যেতে পারে।
এছাড়াও প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিজের তিনটি রোজা রাখার কথা এসেছে হাদিসে। এর প্রতি যত্নশীল হওয়া যেতে পারে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়াম পালন, সারা বছর ধরে সিয়াম পালনের সমান’। (বুখারি, ১১৫৯, ১৯৭৫)
এছাড়া প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার অভ্যাস করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুই দিন বিশেষ রোজা রাখতেন। এ বিষয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহ তাআলার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই- আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি। (সুনানে নাসায়ী, ২৩৫৮)
নবীজির (সা.) জন্মের ঘটনার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো তার জীবনাদর্শের অনুসরণ। জন্মের বিষয়টি একান্তই তার ব্যক্তিগত। কিন্তু তার সিরাত বা জীবনাদর্শ সব যুগের, সব মানুষের জন্য। বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্য। আর নবীপ্রেমের প্রথম শর্ত হলো নবীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন না ঘটলে নবীপ্রেমের দাবি অর্থহীন।