মোটা বেতন টোপ দিয়ে নেয়া হয় কম্বোডিয়ায়, পরে তাদের জোর করে সাইবার প্রতারাণার কাজে লাগানো হয়। সেই চক্র ছড়িয়ে আছে বিশ্বের নানা দেশে। তাদের কাজই হলো বিভিন্ন দেশ থেকে লোক জোগাড় করে কম্বোডিয়ায় পাঠানো। সম্প্রতি এমন ২৫০ জনকে ভারতে ফিরিয়েছে দেশটি। তবে এখনও পাঁচ হাজার ভারতীয় দেশটিতে ‘ক্রীতদাসের’ জীবন কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
গণমাধ্যমটি বলছে, কম্বোডিয়ায় পৌঁছনো মাত্রই চাকরির খোঁজে আসা ব্যক্তিদের থেকে পাসপোর্ট কেড়ে নেয়া হয়। পরে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধ করতে বাধ্য করা হয়। এদেরকে ‘সাইবার ক্রীতদাস’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
জানা গেছে, প্রতিদিন কাজের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলে চলে অত্যাচার। ছুটি না মেলার পাশাপাশি তাদের খাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব ব্যক্তিদের নেয়ার আগে বলা হয়, শুধু ডাটা এন্ট্রি করলেই মিলবে অনেক বেতন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারেন করতে হবে সাইবার প্রতারণার কাজ।
ভারত ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে কম্বোডিয়াতে নেয়া হয় চাকরিপ্রার্থীদের। সম্প্রতি বিষয়টি ভারত সরকারের নজরে আসলে তাদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেয় দিল্লি। কম্বোডিয়া প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে শুরু হয় অভিযান। পরে কম্বোডিয়ায় আটকে পড়া ২৫০ ভারতীয়কে উদ্ধার করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, কম্বোডিয়ায় থাকা ভারতীয়দের জন্য বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সাহায্যপ্রার্থী সব ভারতীয়কে সাহায্য করার জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কম্বোডিয়া থেকে উদ্ধার হওয়া ভারতীয়দের একজন বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা স্টিফেন দেশে ফিরে ভয়াবহ তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। তিনি জানান, বেকার থাকায় বাড়িতে চাপ বাড়ছিল। তাই কাজের সন্ধান শুরু করি। সে সময় বেঙ্গালুরুতে এক এজেন্টের সঙ্গে আলাপ হয়। সেই এজেন্ট বলেন কম্বোডিয়ায় গিয়েডাটা এন্ট্রির কাজ করতে হবে। পরে রাজি হলে স্টিফেনকে পর্যটক ভিসায় সেখানে পাঠানো হয়।
স্টিফেন বলেন, ‘‘আমি কোভিডের সময় কম্পিউটারের কোর্স করি। আমাদের তিনজনকে একসঙ্গে কম্বোডিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। আমাদেরকে পর্যটক হিসাবে পাঠানো হয়। পরে কম্বোডিয়ায় পৌঁছনোর পরে একটা অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাদের টাইপিং স্পিড পরীক্ষা করে দেখা হয়। তারপর আমাদের বলা হয় চাকরি পেয়েছি।’’
কাজের বিষয়ে স্টিফেন জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করা হয়। সেই প্রোফাইলে মেয়েদের নাম এবং ছবি ব্যবহার করা হয়। পরে বিভিন্ন প্রতারণামূলক কাজ করানো হত তাদের দিয়ে। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এ বিষয়ে এফআইআর দায়ের করেছে। সেখানে একাধিক এজেন্ট এবং কোম্পানির নাম উল্লেখ করা হয়েছে।