ইসলামি ডেস্ক
নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় ভিত্তিস্তম্ভ। ফরজ এ ইবাদত সঠিকভাবে আদায়ে সীমাহীন দৈহিক ও আত্মিক প্রশান্তি লাভ হয়। জাগ্রত হয় দয়াময় আল্লাহ ও বান্দার মাঝে নিবিড় বন্ধনের সুখানুভূতি, যা প্রতিটি মানুষের চিরকামনার বিষয়। এর মাধ্যমে আল্লাহর মহত্ত ও শক্তির কথা স্মরণ করা হয়।
নামাজ মুমিনের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্যের প্রতীক। মহান আল্লাহর প্রিয়পাত্র ও নৈকট্যশীল হওয়ার প্রধান মাধ্যম। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের তথা ইমানদারের সঙ্গে মুনাফিকের পার্থক্য বোঝার উপায় হলো নামাজ। যে নামাজ ছেড়ে দেবে, সে অবশ্যই কাফের হয়ে যাবে।’ -সুনানে আবু দাউদ
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রা.) তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলমান ও অন্যদের মাঝে মূল পার্থক্য হলো নামাজ। যে ব্যক্তি নামাজ পরিত্যাগ করবে, সে কাফের হয়ে যাবে।’ জামে তিরমিজি
পবিত্র কুরআন-হাদিসে নামাজ আদায়ের আদেশ উপেক্ষার ভয়াবহ শাস্তি এবং নামাজ আদায়ের বিনিময়ে অপরিসীম সওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে। আলেমরা বলেন, একমাত্র নবী কারিম (সা.) প্রদর্শিত নিয়মানুযায়ী নামাজ আদায় করলেই নামাজ কবুল হবে, আল্লাহর কাছে কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার পাওয়া যাবে। তাই যেভাবে নবী কারিম (সা.) তা আদায় করতেন, একমাত্র সেটাই আমাদের অনুকরণ-অনুসরণ করতে হবে।
পবিত্র কুরআন-হাদিসে বর্ণিত বক্তব্যের ভেতরে নামাজে আগ্রহী হওয়ার পন্থা ও পদ্ধতির কথা ফুটে উঠেছে যথাযথভাবে। কুরআন মাজিদে ঘোষিত হয়েছে, ‘এবং ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য লাভ করো। নামাজকে অবশ্যই কঠিন মনে হয়। কিন্তু তাদের পক্ষে (কঠিন) নয়, যারা খুশু অর্থাৎ ধ্যান ও বিনয়ের সঙ্গে নামাজ আদায় করে। যারা এ বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখে যে, তারা তাদের রব বা প্রতিপালকের সঙ্গে মিলিত হবে এবং তাদের তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে।’ Ñসুরা আল বাকারা : ৪৫-৪৬
বর্ণিত আয়াতে উল্লিখিত ‘খুশু’ শব্দ দ্বারা অক্ষমতা ও অপারগতাজনিত সেই মানসিক অবস্থা বোঝানো হয়েছে, যা আল্লাহর মহত্ত ও শ্রেষ্ঠত্ব এবং তাঁর সামনে নিজের ক্ষুদ্রতা ও দীনতার অনুভূতি থেকে সৃষ্টি হয়। এর ফলে ইবাদত-বন্দেগি সহজতর হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তিনি কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব তাঁর কাছে অবশ্যই দিতে হবে। এসব বিষয় স্থিরচিত্তে স্মরণ করলে নামাজে মনোযোগী হওয়া সহজ হবে।
আমরা জানি, প্রতিদানের কথায় মানুষ উৎসাহিত হয়। সংশ্লিষ্ট কাজের প্রতি মনোযোগী ও আগ্রহী হয়ে ওঠে। অসংখ্য হাদিসে নামাজের প্রতিদানস্বরূপ জান্নাতে প্রবেশ, গুনাহ মাফ, জাহান্নাম থেকে মুক্তি, সফলতা অর্জন ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে। সফলকাম মুমিনের গুণ বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, ‘সফলকাম হলো ওই সব মুমিন, যারা তাদের নামাজে গভীরভাবে মনোযোগী, যারা তাদের নামাজসমূহের হেফাজত করে।’ -সুরা মুমিনন : ১ ও ৮
নবী কারিম (সা.) বললেন, ইমানের পর সবচেয়ে উত্তম ইবাদত হলো সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করা।-সহিহ বোখারি
আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তার মধ্যবর্তী সময়ের, এক রমজান থেকে আরেক রমজান তার মধ্যবর্তী সময়ের, এক জুমা থেকে আরেক জুমার মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেন। যদি বান্দা কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ -সহিহ মুসলিম।