নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত কোনো বিদেশিকে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে আমরা পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। কোনো বিদেশিকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না।
বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কোন দেশের কত নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছে এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কতজন আছে, সেই পরিসংখ্যানটা এখন আমাদের কাছে নেই। অনেক দেশেরই আছে, আমি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করতে চাচ্ছি না। তবে কোনো দেশেরই অবৈধ নাগরিকদের আমরা বাংলাদেশে থাকতে দেব না।
এক প্রশ্নের উত্তরে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এটা হঠাৎ করে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত নয়। আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে এটা জড়িত নয়। এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ নেই।
রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের সতর্ক করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে, অনেক ভিনদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছে এবং অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে। যে সকল বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছে বা কর্মরত আছে, তাদের অবিলম্বে বাংলাদেশে অবস্থানের বা কর্মরত থাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে রবিবার সন্ধ্যায় পিলখানা বিজিবি সদর দপ্তরের সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতদের স্বাবলম্বীকরণে বিজিবির সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এ সময় তিনি বলেন, সীমান্তে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বিজিবিকে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। ওই রকমই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রস্তুতিও সেই রকমই। কোনো সময় বিজিবি পিঠ দেখাবে না, বুক দেখাবে। বিজিবিকে বলা হয়েছে, সীমান্তের কোনো ধরনের উত্তেজনায় কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। কোনো উস্কানি এলে প্রতিহত করতে হবে, ছাড় দেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পঞ্চগড় সীমান্তে হত্যা ও সীমান্ত উত্তেজনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বিজিবিকে নির্দেশনা দিয়েছি, যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি রাখার জন্য। বিজিবি সীমান্তে সব সময় প্রস্তুত থাকবে। তবে সীমান্তে ওই অর্থে কোনো বড় উত্তেজনা নেই। সীমান্তবর্তী বাংলাদেশি নাগরিকদের বলব, উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা সব সময় প্রস্তুত। সীমান্তবর্তী নাগরিকরা সম্পূর্ণ নিরাপদ।
বিজিবিকে কী ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিজিবি অভ্যন্তরীণ ও সীমান্তে নিরাপত্তায় কাজ করবে। তবে অভ্যন্তরীণ কাজ কমিয়ে সীমান্তে মনোযোগ দিতে বলেছি।
এর আগে একই অনুষ্ঠানে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার র্যাব বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছিলেন। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা র্যাব বিলুপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
ভারত যদি সীমান্ত উত্তেজনা বাড়ায় তাহলে বিজিবির উদ্দেশে আপনাদের নির্দেশনা কী থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারত একটা, ভারতের জনগণ অন্য বিষয়। ভারতের জনগণের উত্তেজনায় প্রতিকার করবে গণমাধ্যম, জনগণ আপনারা, আমরা। ওই রকমই নির্দেশনা রয়েছে, ওই রকমই নির্দেশা দেওয়া হয়েছে, প্রস্তুতিও সেই রকমই।
এর আগে রবিবার বিকালে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের বিজিবি হাসপাতালে চিকিৎসা ও দীর্ঘস্থায়ী পুনর্বাসনে বিজিবির মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সারা দেশে বিজিবি অত্যন্ত সহনশীল, মানবিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিজয়-পরবর্তী সময়ে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও যেকোনো সময়ের চেয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, থানাগুলোকে কার্যকর, রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, কল-কারখানা সচল রাখাসহ পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ দমনে বিজিবি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্র-জনতার বিজয় অর্জনকে সুসংহত করতে বিজিবি সীমান্তে জোরদার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তৎকালীন সরকারের প্রায় অর্ধশত বিতর্কিত ব্যক্তিদের সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টাকালে আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করেছে বিজিবি। নতুন প্রেক্ষাপটে বিজিবি দেশের সীমান্ত রক্ষায় জোরদার ভূমিকা পালন করে গত ৩ মাসে সীমান্তে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চোরাকারবারিদের আটক ও বিপুল পরিমাণ ভারতীয় চোরাচালানির মালামাল জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী তার স্বাগত বক্তব্যে জুলাই বিপ্লবে আত্মোৎসর্গকারী বীর যোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে তাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি এক নতুন বাংলাদেশের ঠিকানা পেয়েছে। সেই অভিষ্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিজিবিও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের শুরু থেকেই বিজিবি স্ব-উদ্যোগে বর্ডার গার্ড হাসপাতালে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন আহত ছাত্র-জনতাকে বিভিন্ন মেয়াদে বর্ডার গার্ড হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিলুপ্তি চেয়ে কবি, লেখক ও গবেষক ফরহাদ মজহার বলেছেন, র্যাব গঠনের পরপরই আমি বলেছিলাম এই র্যাবের কারণে বিএনপির পতন ঘটবে। কারণ সেনাবাহিনীর একজন সদস্যকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে র্যাবে এনে এমন কিছু কাজ করাচ্ছেন যা তারা কখনও করে না। আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সবিনয় অনুরোধ করব আপনি র্যাবকে দ্রুত বিলুপ্ত ঘোষণা করবেন।
ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, দেশের সব নাগরিককে সামরিক ট্রেনিং নিতে হবে। দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে সেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। হাসিনাকে পুনর্বাসন করতেই ভারত তাকে দিল্লিতে জায়গা দিয়েছে। কোনো ধরনের প্রোপাগান্ডায় কান না দেয়ার আহ্বান। জনতা-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরোধ ৫ আগস্টে শেষ হয়েছে। তাই এখন সৈনিকও জনতা জনতাও সৈনিক। তাই দেশের ভেতর যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয় দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট না হয় সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মেজর আহমেদ ফেরদৌস (অব.) ও উইমেন সাপোর্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মিসেস তৌহদা হক প্রমুখ।