নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী ঢাকার পৃথক স্থানে গণমিছিলের মধ্য দিয়ে সরকারের পদত্যাগের এক দফার দাবিতে নতুন লড়াই শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকালে রাজধানীর বাড্ডায় সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে গণমিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘এবারের লড়াই হচ্ছে জীবন-মরণের। কোনো ভয় দেখিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। নতুন যুদ্ধ, নতুন লড়াই শুরু করেছি। মিছিলের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাই, তোমাদের দিন শেষ। মানে পদত্যাগ কর।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারকে এবার নির্বাচন নিয়ে কোনো খেলা খেলতে দেওয়া হবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই গণমিছিল সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে থেকে বিকাল পৌনে ৪টায় শুরু হয়। সেটি বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার আবুল হোটেলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত আরেকটি গণমিছিল বিকাল পৌনে ৪টার দিকে কমলাপুর স্টেডিয়াম থেকে শুরু হয়। এটি মালিবাগ রেলগেটসংলগ্ন কাঁচা বাজারে গিয়ে শেষ হয়।
গণমিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নির্বাচন প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দেন। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন, সেই নির্বাচনকে অবশ্যই প্রতিহত করব। আর এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। হতে দেওয়া হবে না। আমাদের একটা মাত্র দাবি, এই সরকারের পদত্যাগ। তাই যতক্ষণ পদত্যাগ না করবে, ততক্ষণ কর্মসূচি চলতে থাকবে।’
২৯ জুলাই রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচির প্রায় ১৩ দিন পর এই গণমিছিলের মাধ্যমে যুগপৎ কর্মসূচিতে ফিরল বিএনপি। অবস্থান কর্মসূচিতে যেসব দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে, তা কাটাতে এরই মধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে দলটি। আন্দোলনে গতি আনতে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এমন আলোচনা আছে। এমন অবস্থায় গণমিছিল হলো। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিএনপির এই দুই গণমিছিলেই ব্যাপকসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে। এতে শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটির দিনের ফাঁকা রাস্তায়ও বাড্ডা ও কমলাপুর, মালিবাগসহ আশপাশের এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।
রাজধানীতে বিএনপির এই দুই গণমিছিলে শোডাউন করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। এর সঙ্গে দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নগর কমিটিও প্রস্তুতি নেয়। দলটি এই গণমিছিলের মধ্য দিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে চায়। এজন্য জুমার নামাজের আগে থেকেই মিছিলস্থলে নেতাকর্মীরা জড়ো হন। আগেভাগে জড়ো হওয়ার কারণে নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলের আশপাশের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।
বাড্ডায় গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সরকারের পদত্যাগের আওয়াজ দেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন পর্যন্ত পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই মিছিল কেন? এক দাবি—শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এই আওয়াজ গণভবন-বঙ্গভবন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাদের স্বাধীনতার সমস্ত অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের গণতন্ত্র, অর্থনীতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সব ধ্বংস করে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে দেশের বিচারব্যবস্থা। বিচারালয়ের ওপর ভর করে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় আমাদের নেতাকর্মীদের সাজা দিচ্ছে।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তাতে কি আন্দোলন বন্ধ করা যাবে? যতই নির্যাতন কর, কারাগারে ঢোকাও—আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার ফিরিয়ে এনে ঘরে ফিরব।’
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা আবারও উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সংসদ ভেঙে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নতুন কমিশন গঠন করে তাদের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।’
নতুন দুটি রাজনৈতিক দল—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে (বিএসপি) নিবন্ধন দিয়ে বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেউ এ দুই দলকে চেনে না। এদের দিয়ে সরকার নির্বাচন-নির্বাচন খেলা খেলতে চায়। এবার এ খেলা খেলতে দেওয়া হবে না।’ তবে এদিন বিএনপির মহাসচিব এক দফা আন্দোলনের নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা দেননি।
এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আরেক গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বরকত উল্লাহ বুলু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
এদিকে বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলনের শরিক জোট ও দলগুলোও আজ রজাধানীর বিভিন্ন স্থানে গণমিছিল করেছে। এগুলো হচ্ছে—গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের উভয় গ্রুপ, লেবার পার্টি, এনডিএম। এ ছাড়া এবি পার্টিও বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে।