চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে মা ও শিশু হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এক লক্ষ টাকা জরিমানাসহ হাসপাতালটি সিলগালা করে বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
বুধবার সকালে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি রেজওয়ানা চৌধুরী ও টি এইচ ও মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন হাসপাতালটি সিলগালা করে, ১লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। টি এইচ ও ডাক্তার নাসির উদ্দিন জানান, বিভিন্ন অভিযোগের আলোকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা কালে দেখা গেছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ডাক্তার, নার্স, সিস্টার কিছুই না থাকায় হাসপাতালে সিলগালা করা হয়েছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে শাহরাস্তি পৌরশহরের মেহের কালীবাড়িতে মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসকের ভূল চিকিৎসায় ফারজানা আক্তার (২৪) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। সোমবার দুপুরে উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের হাঁড়িয়া ভূঁইয়া বাড়ীর বাসিন্দা প্রাইভেট কার চালক আলম হোসেনের স্ত্রী এক সন্তানের জননী ফারজানা আক্তার ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন।পরে ওইদিন বিকাল ৪ টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক এনেন্সথেসিয়া ডা: বাসেত, গাইনী চিকিৎসক ডা: তানিয়া আক্তার, ও সার্জারী চিকিৎসক ডা: শরীফ আহমেদ তাকে ভর্তি দিয়ে সিজার করান। কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক রোগীর পরিবারকে ব্লাড সংগ্রহ করার জন্য বলেন। পরে সন্ধা ৬ টা ৫০ মিনিটে রোগীর মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড দেখিয়ে সিজারের সমুদয় টাকা নিয়ে ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে বিদায় দেন। এ্যাম্বুল্যান্সে রোগীর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে রোগীর সাথে থাকা আত্মীয়-স্বজনরা উপজেলার কালিয়াপাড়াস্থ বশিরউল্ল্যাহ মেডিক্যালে ইসিজি মাধ্যমে নিশ্চিত হন প্রসূতি ফারজানা আক্তার মৃত্যুবরণ করেছেন। এসময় সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশু কন্যা সন্তানের চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। পরবর্তীতে রোগীর স্বজন ওই হাসপাতালে হামলার চেষ্টা চালালে শাহরাস্তি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন পরিস্থিতি সামাল দেন। এবিষয়ে নিহতের স্বামী মোঃ আলম হোসেন জানান, আমার স্ত্রীর কোন অসুখ ছিলনা। আমার প্রথম সন্তান আল আমিন (৪) সিজারে হয়েছে, তাই এ সন্তানটিও সিজারে হয়। মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকগন আমার স্ত্রীকে খুন করে ফেলেছে, আমি এর বিচার চাই।
প্রসূতির মৃত্যুর বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক তোফায়েল আহমেদ তপু জানান, পূর্ব থেকে রোগীর শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। রোগীর পরিবার তা অপারেশন করার আগে জানাননি।অপারেশনের পর তার শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।
এবিষয়ে কত্যর্বরত চিকিৎসক ডাঃ বাসেত, ডাঃ তানিয়া ও ডাঃ শরীফ আহমেদের সাথে মুঠো ফোনে বার বার যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।বর্ণিত বিষয়ে শাহরাস্তি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, বিষয়টি অবগত হওয়ার সাথে সাথে আমরা ঘটনাস্থলে এসে হাজির হই। সকল ধরণের বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত ছিলাম। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে টিউএইচও নাসিরুদ্দিন বলেন, হাসপাতালটি সিলগালা করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে পূর্বেও বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে এই হাসপাতালটিতে কিন্তু কোন প্রতিকার না হওয়ায় এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।