ইসলামী ডেস্ক
কুরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি যখন মানুষকে নেয়ামত দান করি, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও পাশ কাটিয়ে যায়। আর যদি কোনো অনিষ্ট তাকে স্পর্শ করে, তখন সে হতাশ হয়ে পড়ে।’ সুরা আল ইসরা : ৮৩
বর্ণিত আয়াতে মানুষের বাস্তব অবস্থা ও পরিস্থিতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। সচ্ছলতার সময় যারা আল্লাহকে ভুলে যায় অসচ্ছল অবস্থায় তারা নিরাশ হয়ে পড়ে। আল কুরআনে জোর দেওয়া হয়েছে যে, মানুষ পার্থিব জীবনে সব সময়ই কষ্টে থাকে, তবে জীবনের কষ্ট থেকে দূরে থাকার উপায়ও বলা হয়েছে। ১০৩তম সুরার নাম আল আসর। ৮ আয়াতবিশিষ্ট সুরাটি কুরআনের শেষ পারায় অবস্থিত। এ সুরায় মহান আল্লাহ সময় ও কালের অর্থে আসরের কসম করেছেন।
কুরআন মাজিদের ব্যাখ্যাকাররা বলেছেন, সুরা আসর জোর দিয়ে বলে যে, মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে; শুধু তারা ছাড়া যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে এবং একে অন্যকে সত্য ও ধৈর্যের নির্দেশ দেয়।
সুরায় উল্লিখিত ‘খুসর’ (ক্ষতি) শব্দটি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত শব্দটি কুরআন মাজিদে ৬০ বারের বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। বস্তুগত বিষয়ে মানুষের অসুবিধার অর্থ অভাব, নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, পথভ্রষ্ট হওয়া, ধ্বংস হওয়াকে বোঝায়। আর কুরআন মানুষের অসুবিধা সম্পর্কে যা বোঝায়, তার বেশিরভাগই মানসিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষতির অর্থে।
আল্লামা সুয়ুতি (রহ.)-এর মতে, দুনিয়ার জীবনই মানুষের মূলধন, যা নিয়ে পরকালে সুখে-শান্তিতে সে থাকবে। সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের সেই চেষ্টা করা উচিত। বিশ্বাস, কাজ ও আচার-আচরণ যদি সত্যের ওপর ভিত্তি করে হয় তাহলে তাদের ব্যবসা (দুনিয়ায় বসবাস) লাভজনক হবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ মন্দ ও খারাপ থেকে দূরে থাকবে, কিন্তু তারা যদি মিথ্যার আনুগত্য করে এবং ঈমান ও সৎকাজ থেকে দূরে থাকে তাহলে তাদের ব্যবসা লোকসানে পূর্ণ হবে এবং এর ফলে আখেরাতের কল্যাণ ও নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হতে হবে।
সুরা আসরের শুরুতে মহান আল্লাহতায়ালা আসর বলে কসম করেছেন। আসর অর্থ সময় বা যুগ। অর্থাৎ মানুষ প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং তার আয়ু শেষ হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য যারা চারটি নীতির প্রতি মনোযোগ দিয়ে ক্ষতিকারক জীবন থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারে, তারা ছাড়া। সেগুলো হলো, যারা বিশ্বাস স্থাপন (ঈমান এনেছে) করেছে ও সৎকর্ম করেছে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ ও ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে। এ আয়াতে অন্যদের সত্য অবলম্বন ও ধৈর্যধারণের পরামর্শ দানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর আলোকে আমরাও আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী থেকে শুরু করে অন্যদের সেগুলো পালনের আমন্ত্রণ জানাতে পারি।