নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার বাজারে গরুর মাংসের দাম বেশ কমেছে। প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া গরুর মাংস এখন ৬০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, অর্থাৎ ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে গরুর মাংসের দাম। ফলে মধ্যবিত্ত ক্রেতা তো বটেই, অনেক নিম্নমধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষ দোকানে সারিতে দাঁড়িয়ে গরুর মাংস কিনছেন। দুই সপ্তাহ ধরে গরু মাংসের দামে এই পরিবর্তনের ফলে বাজারে কমতে শুরু করেছে চাষের মাছ ও ব্রয়লার মুরগির দামও। দোকানিদের বিক্রিও বেড়েছে কয়েকগুণ।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি মাংসের বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ায় বিক্রেতারাও খুশি। দুই পক্ষই বলছে, অনেক দিন পর এ বাজারে ‘স্বস্তি’ ফিরেছে।
মিরপুরের পীরেরবাগ, শ্যাওড়াপাড়া, তালতলাসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। মাংস বিক্রেতারা বলছেন, দামের কারণে বিক্রি একেবারেই কমে গিয়েছিল। খুব প্রয়োজন না হলে কেউ গরুর মাংস কিনতেন না। দাম কমায় লাভের অংক কমেছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে প্রচুর।
ক্রেতারা বলছেন, অনেক দিন পর মাংসের দাম রাতারাতি কমে যাওয়ায় স্বস্তি হচ্ছে। আগে নিয়ম করে একবার-দুবার মাংস খাওয়া হতো। এবার মনে হচ্ছে, মাসে কয়েকবার খাওয়া যাবে। দাম বেড়ে গেলে তারা নাকি আর মাংস কিনবেন না।
গরুর মাংসের দাম কমার প্রভাব পড়েছে মাছ-মুরগির বাজারেও। মিরপুরের বাজারে সব ধরনের মাছ ও ব্রয়লার মুরগির কেজি ১০ থেকে ২০ টাকা করে কমেছে। মাছ বিক্রেতারা বলছেন, তাদের কাছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজির নিচে কোনো দেশি মাছ নেই। দাম কমায় ভোক্তারা মাছের বদলে পরিবারের জন্য মাংস কিনছেন। তাই ১০ থেকে ২০ টাকা করে মাছের দাম কমিয়েছেন।
‘এই দরপতনকে’ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, দামের কারণে যারা এ প্রাণিজ আমিষ প্রায় গ্রহণ করেত পারত না, তাদের উপকার হলো সবচেয়ে বেশি।
উত্তরার একটি ব্রোকারেজ হাউজে কাজ করেন আবুল কাসেম। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বাজারে এসেছেন মাংস কিনতে। কথা হলে তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের মাংস বেশ কয়েকদিন ফ্রিজে ছিল। অল্প অল্প করে খাওয়া হয়েছে। এরপর কেনাও হচ্ছিল না দামের কারণে। গত কয়েকদিন ধরে দাম কমায় বাজারে আসতে সাহস করলাম। গত সপ্তাহে দুই কেজি মাংস কিনেছিলাম। আজও বেশ কয়েক কেজি কিনেছি।
তিনি আরো বলেন, পরিবারের সবাই গরুর মাংস পছন্দ করে। কিন্তু ৮০০ টাকা কেজি দরে কেনাটা কষ্টকর, খাওয়াও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গরুর চাহিদা মুরগির মাংস দিয়ে পূরণ হচ্ছিল। দাম কমায় এখন বেশি করে কিনে রাখছিল।
গরুর মাংসের দাম কমায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে বলে জানান রেজাউল করিম নামে এক মুদি দোকানদার। শ্যাওড়াপাড়া বাজারে গরুর মাংস কিনছিলেন তিনি। রেজাউল জানান, শাক-সবজির পাশাপাশি সপ্তাহে দুয়েকদিন মাছ খাওয়া হতো তাদের। সপ্তাহে একদিন মুরগির মাংস রান্না হতো তার। খেতে খেতে অভক্তিও লেগে গিয়েছিল। দাম কমায় সপ্তাহে তাদের খাবারের তালিকায় একদিন গরুর মাংস থাকছে।
দাম কমায় লাভ কেমন হচ্ছে, এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয় তালতলার মাংস ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা জানান, আগের চেয়ে বিক্রি দ্বিগুণ বেড়েছে। কিন্তু লাভের পরিমাণ আগের মতোই আছে। দাম কমায় বিক্রি বেশি, তাই বলে যে লাভও বেশি হচ্ছে বিষয়টি তা নয়।
শামছু নামে তালতলা বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, কয়েকদিন আগেও প্রতিদিন একটা কইরা গরু জবাই দিতাম। গত ১৫ দিন ধইরা দুইটা কইরা জবাই দিতাসি। দুপুর ১টার মধ্যেই মাংস শ্যাষ হইয়া যাইতাসে। ৫৮০ ট্যাকা দিয়া ঢাকার ভিতরে কোথাও মাংস পাইবেন না। আমরাই দিতাসি। লাভ কম হইতাসে, কিন্তু চাহিদা আগের চেয়ে বাড়সে। ক্ষতি হইতাসে না। ক্রেতারা কইতাসে দাম বাড়লে আর কিনবো না।
গত মার্চে গরুর মাংসের দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৮৫০ টাকা হয়েছিল। ফলে সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় এ প্রাণিজ আমিষ। বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমেছে।