মানিকগঞ্জের সিংগাইরের গাজরের সুখ্যাতি আগে থেকেই। দেশে উৎপাদিত মোট গাজরের ৩৪ শতাংশ এ উপজেলায় হয়। লাভজনক হওয়ায় ব্যাপক হারে গাজর চাষের দিকে ঝুঁকছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। কিন্তু বর্তমানে বীজ ও কীটনাশকের দাম অধিক হওয়ার কারণে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।
উপজেলার কিটিংচর, দেউলী, দশানী, ভাকুম, নয়াপাড়া, মেদুলিয়া, গাজিন্দা, লক্ষ্মীপুর, নীলটেক, কানাইনগর, মোসলেমাবাদ, বিন্নাডাঙ্গী, সুদক্ষিরা, জামির্তা, আজিমপুর ও চর দুর্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় সাত হাজারেরও বেশি কৃষক গাজর চাষের সঙ্গে জড়িত। এসব এলাকার ৯৫০ হেক্টর জমিতে গাজরের চাষ হয়েছে। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠে যতদূর চোখ যায় শুধু গাজরের সমাহার। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখানকার গাজর যাচ্ছে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে সিংগাইরের গাজর।
কৃষি অফিসের কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা জানান, সিংগাইর উপজেলায় গাজর চাষ শুরু হয় প্রায় দুই দশক আগে। প্রথম দিকে শুধু জয়মন্টপ ইউনিয়নের দেউলী-দশানী ও ধল্লা ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় স্বল্প পরিসরে এর চাষাবাদ শুরু হয়। সময়ের ব্যবধানে গাজর চাষ এখন সমগ্র সিংগাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সীমিত আকারে রপ্তানিও হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
কয়েক কৃষক জানান, গেল বছর এই অঞ্চলের চাষিরা গাজর বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছে। এই বছর গাজরের বীজের অধিক দামের কারণে তাদের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন। কৃষকদের অভিযোগ, স্থানীয়ভাবে কোনো আমদানিকারক না থাকায় ডিলাররা তাদের কাছ থেকে বীজের দাম বেশি রাখছেন। তাই সরকারিভাবে বীজের দাম নির্ধারণের দাবি তাদের।
হারুলিয়া গ্রামের কৃষক আসমত আলী জানান, এ বছরও তিনি ৫৫ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছেন। তার বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৫০-৬০ হাজার টাকা। আর প্রতিবিঘা জমির গাজর বিক্রি করতে পারছেন ৬০-৭০ হাজার টাকায়।
কীটনাশক ও বীজের দাম বেশি থাকায় তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এক কেজি গাজরের বীজ কিনতে হয়েছে ২২ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। আগে ছিল ১১ থেকে ১৭ হাজার টাকা। আর কীটনাশকের দাম ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা বস্তা। কিন্তু এ বছর কিনতে হয়েছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়।’ তাই এ বছর ৫-৭ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক আসমত আলী।
সিংগাইর থেকে পরিবহন খরচ বেশি বলেও জানান গাজরের পাইকারি ক্রেতারা। তারা বলেন, ঢাকায় গাজর নিয়ে যেতে শহীদ রফিক সেতুতে যাওয়া-আসায় তিনশ টাকা টোল দিতে হয়। ফলে মাস শেষে ২০-৩০ হাজার টাকা শুধু টোল খরচই যায়। পাইকারি ক্রেতা আহমদ আলী ও হারুন মিয়া বলেন, বর্তমানে গাজরের দাম অনেক কম। প্রতি বিঘা খেতের গাজর কিনতে হয় ৬০-৭০ হাজার টাকায়। লেবার খরচ আছে ১৫ হাজার টাকা। এক মণ গাজরের দাম ৫০০ টাকা। তাই প্রতি বিঘায় ১০-১৫ হাজার টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার বলেন, ‘এ বছর সিংগাইরে ৯৫০ হেক্টর জমিতে গাজরের চাষ হয়েছে, যা দেশের মোট উৎপাদিত গাজরের ৩৪ শতাংশ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। সে হিসেবে কৃষকের লাভবান হওয়ার কথা। তবে কৃষকদের অভিযোগ, এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বীজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। এজন্য উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে।’