ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা মানুষকে গুনাহ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন উপায় বলে দেয়। প্রেম করলে শয়তান অবশ্যই জিনা করতে প্রলুব্ধ করবে। আর তাই ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম করা হারাম।
পবিত্র কোরআনুল কারিম ও সুন্নাহর নির্দেশনা হলো- নারী-পুরুষ বিয়েবহির্ভূত প্রেম-ভালোবাসায় জড়াবে না। এই অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা হারাম ঘোষণা করে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জেনা তথা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ’। (সূরা: বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৩২)
কিন্তু আরো প্রশ্ন হচ্ছে, বিয়ের উদ্দেশ্যে প্রেম করা জায়েজ কি? এর উত্তর হচ্ছে- না, জায়েজ নেই। বিয়ের মতো সৎ ইচ্ছা থাকলেও বেগানা-নারী পুরুষ সম্পর্কে জড়াতে পারে না। এটি ইসলামে কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। নারী-পুরুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন একে অপরকে না দেখে থাকতে পারে না। দূরে থাকলেও ফোনে কথা বলে, ছবি বা ভিডিও দেখে অথবা সারাক্ষণ তাকে নিয়ে চিন্তা করে, স্বপ্নের বাসর সাজায়-যার প্রতিটি স্তরকেই হাদিসে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং বিয়ে করার দৃঢ়সংকল্প থাকলেও কোনো বেগানা নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম।
আবারো প্রশ্ন জাগতে পারে, অনেকের ক্ষেত্রে তা হয়ত শারীরিক সম্পর্কে না-ও গড়াতে পারে, সে ক্ষেত্রেও কি তা হারাম হবে? হ্যাঁ, সেক্ষেত্রেও হারাম। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। (বুখারি: ৬২৪৩)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, দুই চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীর দিকে) তাকানো, কানের ব্যভিচার যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের ব্যভিচার আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের ব্যভিচার (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা আর পায়ের জিনা ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া এবং মনের ব্যভিচার হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। (মেশকাত: ৮৬)
তাই ইসলামী দিক-নির্দেশনা হলো- নারী-পুরুষ উভয়ে অবৈধ সংস্পর্শ, হাসাহাসি, রসিকতা, কথা-বার্তা, দেখা-সাক্ষাৎ, থেকে বেঁচে থাকবে; নিজেদের দীন ও আত্মসম্মান রক্ষা করবে। প্রকৃত প্রেম হলো মহান আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি প্রেম, যা ছাড়া কোনো মানুষ ঈমানদার হতে পারবে না। দুনিয়ায় কেউ কাউকে ভালোবাসলে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মা ও রক্তের আত্মীয়দের প্রতি এই প্রেম মহান আল্লাহ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত করে দেন।
রাসূল (স.) ইরশাদ করেছেন, সওয়াবের আশায় কোনো মুসলমান যখন তার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে, তা তার সদকা হিসেবে গণ্য হয়। (মুসলিম: ১২/১৪: ১০০২)
তবে, মানুষ হিসেবে একে অপরকে ভালোবাসা আল্লাহর বড় নেয়ামত। এটি শরিয়তে কাম্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহে মহব্বত পয়দা করে দিলেন। অতঃপর তোমরা তার অনুগ্রহে পরস্পরে ভাই ভাই হয়ে গেলে’। (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩)
সেই হিসেব মানুষ মানুষকে ভালোবাসতে পারে। নারী হোক বা পুরুষ। কিন্তু বিয়ের আগে বেগানা নারী-পুরুষ সম্পর্কের দিকে আগাবে না। প্রেমের চিন্তা যাদের মাথায় আসে, তাদের উচিত বিয়ে করার চেষ্টা করা এবং দোয়া করা। কেননা ‘বিয়ে’ দীনের অর্ধেক।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে’। (সহিহ আল-জামিউস সাগির ওয়া জিয়াদাতুহু: ৬১৪৮; তাবারানি: ৯৭২; মুসতাদরাক হাকিম: ২৭২৮)
আর স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা শুধুমাত্র বৈধ নয়, কাঙ্ক্ষিত এবং পবিত্রও। ইসলাম এই ভালোবাসার প্রতি খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার স্ত্রীদের ভালোবাসতেন। তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতেন। তাদের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। তাদের নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করতেন।
হাদিসে আছে, ‘রাসূলুল্লাহ (স.) হজরত আয়েশা (রা.) এর সঙ্গে দৌঁড় প্রতিযোগিতা করেছেন’। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘আমি ও নবী (সা.) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম। সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো’। (সহিহ বুখারি: ২৫০)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সে ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন, যার চরিত্র সুন্দর, তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম’। (রিয়াদুস সালিহিন: ১/১৯৭)
ইয়া আল্লাহ! প্রত্যেক মুসলিম উম্মাহকে হারাম সম্পর্ক থেকে হেফাজত করুন। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে ভালোবাসার তাওফিক দান করুন। পবিত্র জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।