দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর জেলায় ৩০ জন প্রার্থীর মধ্যে ২০ জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাড়া দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ অন্যসব রাজনৈতিক দলের ২০ জন জামানত হারিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো প্রার্থীকে জামানত রক্ষা করতে হলে মোট প্রদত্ত ভোটের (কাস্টিং ভোট) আট ভাগের এক ভাগ পেতে হবে। এমনটাই জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকতা তোফায়েল হোসেন। তিনি বলেন, চাঁদপুরে গড়ে ৩৬ শতাংশ ভোট কাস্টিং হয়েছে।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার তথ্য অনুসারে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন চাঁদপুর -৪ আসনের প্রার্থী বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ) বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী ফুলের মালা প্রতীক। ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ২০১ ভোট পেয়েছেন।এছাড়াও তিনি চাঁদপুর -৫ আসনেও প্রার্থী ছিলেন। ওই আসনে ৫৫৬ ভোট পেয়েছেন।
চাঁদপুর -১ আসনে ৩ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। এ আসনে ১৫৩ কেন্দ্রে ৪ লাখ ৮৫হাজার ৫৬১ জন ভোটার ।এর মধ্যে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৯১ ভোট (অর্থাৎ কাস্টিং ভোট)। এতে ৩ হাজার ৮৭৬ ভোট বাতিল হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ড.সেলিম মাহমুদ পেয়েছেন ১ লাখ ৫১ হাজার ৩০৭ ভোট। তিনি ছাড়া বাকি দুই প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ সেলিম প্রধান চেয়ার প্রতীক ৫ হাজার ৭৭৯ ভোট এবং জাসদের সাইফুল ইসলাম মশাল প্রতীক ৩ হাজার ৮২১ ভোট পেয়েছেন।
চাঁদপুর -২ আসনে ৫ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। এ আসনে ১৫৫ কেন্দ্রে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ২২৮ জন ভোটার । এর মধ্যে মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ২৬ ভোট (অর্থাৎ মোট কাস্টিং ভোট)। এতে ২ হাজার ৮৮২ ভোট বাতিল হয়। ওই হিসেবে এ আসনে প্রায় ২৬ হাজার ৬২৮ ভোট প্রয়োজন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৯ ভোট। তিনি ছাড়া বাকি চার প্রার্থী কেউই উল্লেখিত ভোট পায় নেই। এতে তারা সবাই জামানত হারিয়েছেন। ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম. ইসফাক আহসান পেয়েছেন ২১ হাজার ৩৩৫ ভোট, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মো. এমরান হোসেন মিয়া(নাঙ্গল), ১ হাজার ২৬৫ ভোট, বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির একতারা প্রতিক নিয়ে মনির হোসেন পেয়েছেন ৯৫৮ ভোট, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) মশাল প্রতিক নিয়ে হাছান আলী সিকদার পেয়েছেন ৫৮৭ ভোট।
চাঁদপুর -৩ আসনে ৭ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। এ আসনে ১৬৫ কেন্দ্রে ৫ লাখ ৫ হাজার ৯৩২ জন ভোটার ।তার মধ্যে মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ২৪২ ভোট (অর্থাৎ মোট কাস্টিং ভোট)। এতে ৩ হাজার ৩১০ ভোট বাতিল হয়। ওই হিসেবে এ আসনে প্রায় ১৭ হাজার ৫৩০ ভোটের প্রয়োজন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. দীপু মনি পেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ১৬৬ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ঈগল প্রতীকে ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভুঁইয়া পেয়েছেন ২৪ হাজার ১৯৭ ভোট। তারা ছাড়া বাকি ৫জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. মহসীন খান নাঙ্গল ৮২৮, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী আবু জাফর মো. মাইনুদ্দিন মোমবাতি প্রতীকে ৭৩৩, জাকের পার্টির মনোনীত প্রার্থী মো. কাওছার মোল্লা গোলাপ ফুল প্রতীকে ১ হাজার ৪৩৭, বাংলাদেশ তরিকত মনোনীত প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান ফুলের মালা প্রতীকে ৩৪৩, এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী রেদোয়ান খান বোরহান ট্রাক প্রতীকে ১ হাজার ২২৮ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে শিক্ষামন্ত্রী টানা চতুর্থবারের মতো বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলেন।
চাঁদপুর -৪ আসনে ৮ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। এ আসনে ১১৮ কেন্দ্রে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ১২৯ জন ভোটার । এর মধ্যে মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৯৫ হাজার ৮৪০ ভোট (অর্থাৎ মোট কাস্টিং ভোট)। এতে ২ হাজার ৭৬৪ ভোট বাতিল হয়। ওই হিসেবে এ আসনে প্রায় ১১ হাজার ৯৮০ ভোটের প্রয়োজন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুহম্মদ শফিকুর রহমান পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৪৫৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীক ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভুঁইয়া পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৪২৫ ভোট এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জালাল আহমেদ ট্রাক প্রতীকে ১৮ হাজার ৭৬০ ভোট পেয়েছেন। তারা তিন জন ছাড়া বাকি ৫ জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী সাজ্জাদ রশিদ নাঙ্গল প্রতীকে ৫৯০, তৃণমূল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. আব্দুল কাদির তালুকদার সোনালী আঁশ প্রতীকে ৩৬০, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) আব্দুল গনি আম প্রতীকে ২০৮, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ) বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী ফুলের মালা প্রতীকে ২০১ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ আন্দোলন (বিএনএম) মনোনীত প্রার্থী ড. মোহাম্মদ শাহজাহান নোঙ্গর প্রতীকে ১ হাজার ৭৪, এ আসনে টানা ২য় বারের মতো বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলেন মুহম্মদ শফিকুর রহমান।
চাঁদপুর -৫ আসনে ৭ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। এ আসনে ১৫৩ কেন্দ্রে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫৬১ জন ভোটার । এর মধ্যে মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১লাখ ৫৬ হাজার ৪৫১ ভোট (অর্থাৎ মোট কাস্টিং ভোট)। এতে ৩ হাজার ৮৭৬ ভোট বাতিল হয়। ওই হিসেবে এ আসনে প্রায় ১৯ হাজার ৫৯১ ভোট প্রয়োজন। এতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম পেয়েছেন ৮৪ হাজার ১৭ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মাঈনুদ্দিন ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৩৮ হাজার ১৫৫ ভোট।
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ সফিকুল আলম ট্রাক প্রতীকে ২২ হাজার ৫৩৫ ভোট পেয়েছেন। তারা তিন জন ছাড়া বাকি ৪ জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।এরা হলেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ্ মুজাদ্দেদী চেয়ার ৭ হাজার ১৪৪ ভোট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের (বিটিএফ) বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী ফুলের মালা প্রতীকে ৫৫৬ ভোট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মনোনীত প্রার্থী আক্তার হোসেন ছড়ি প্রতীকে ১৩৭ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে টানা ৪র্থ বারের মতো বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলেন মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম।