Header Border

ঢাকা, রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

জিকির ও জ্ঞানের মজলিসের ফজিলত শায়খ ড. সালাহ বিন মুহাম্মাদ আল বুদাইর

সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস, উৎকৃষ্ট বাগান এবং সর্বোত্তম মজলিস (বৈঠক, সভা, আসর) হলো- জিকির ও ইলমের (শিক্ষা আদান-প্রদান) মজলিস। এই মজলিসগুলো ফলাফলের দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ, উৎকৃষ্ট, অধিক ফলপ্রসূ, সবচেয়ে উন্নত, উপকারের দিক থেকে সুমহান এবং লাভের দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো অন্বেষণকারীর জন্য জ্যোতি, সংগ্রহকারীর জন্য সাহায্যকারী, বিষাদগ্রস্তের জন্য সঙ্গী এবং প্রহরীর জন্য ঢালস্বরূপ। আর এগুলো ইলমের এমন বাগান যার ফুল শুকিয়ে যায় না এবং এমন কল্যাণের সমাহার যার সুফল দৃষ্টি এড়ায় না। সুতরাং সে সফলকাম যে এর সংগৃহীত ফল উপভোগ করে এবং এর মাধুর্যে আলোকিত হয়।

বলা হয়, ‘আলেমরা হলেন সর্দার এবং তাদের সঙ্গে ওঠাবসা জ্ঞান বৃদ্ধির উপায়।’ মায়মুন ইবনে মেহরান বলেন, ‘আলেমদের সাহচর্যে আমি আমার অন্তরের পরিশুদ্ধতা পেয়েছি।’

ইলমের মজলিস হলো- পরিপক্ব ও মনোহর বাগিচা এবং দোলায়িত পল্লবিত বাগান। যে ব্যক্তি এসব মজলিসে নিয়মিত হবে সে সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা অর্জন করবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষণে কোনো পথে চলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন।’

জ্ঞান অন্বেষণের পথে চলার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে- জ্ঞানের মজলিসে গমন করা, তা মুখস্থ করা, চর্চা ও অধ্যয়ন করা, বোঝা, এটা নিয়ে গবেষণা করা এবং আলেমদের সঙ্গ নেওয়া। এসব মজলিস চোখের শীতলতা বৃদ্ধি করে, আনন্দে আত্মাকে পূর্ণ করে, এবং শান্তি, প্রশান্তি ও প্রজ্ঞা দিয়ে হৃদয়কে সমৃদ্ধ করে। হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! জিকিরের মজলিসের গনিমত কী? তিনি বলেন, জিকিরের মজলিসসমূহের গনিমত বা লাভ হলো- জান্নাত।’ -মুসনাদে আহমাদ

ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় জান্নাতের বাগানে থাকতে চায়, সে যেন জিকিরের মজলিসে অবস্থান করে, কেননা এগুলোই জান্নাতের বাগান।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘জিকিরের মজলিস হলো- ফেরেশতাদের মজলিস, আর অসার কথাবার্তা ও গাফিলতির মজলিস হলো- শয়তানের মজলিস। তাই বান্দার উচিত এ দুটোর মধ্যে যা তার অধিক পছন্দনীয় ও সবচেয়ে উত্তম তা বেছে নেওয়া; কেননা সে দুনিয়া ও আখেরাতে এদের সঙ্গেই থাকবে।’

হজরত আতা (রহ.) বলেছেন, ‘জিকিরের মজলিস হলো হালাল-হারাম বর্ণনার মজলিস; কীভাবে ক্রয়-বিক্রয় করবে, নামাজ ও রোজা পালন করবে এবং বিয়ে, তালাক, হজ ও অন্যান্য বিষয় সম্পাদন করবে তা শিক্ষা দেওয়া হয়।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) ও হজরত আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো একদল লোক কোনো মজলিসে বসে আল্লাহর জিকির করে, তখন আল্লাহর ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে নেয় ও আল্লাহর রহমত তাদের আচ্ছাদিত করে রাখে এবং তাদের ওপর প্রশান্তি নাজিল হতে থাকে। আর আল্লাহ তার নিকটতম ফেরেশতাদের মধ্যে তাদের সুখ্যাতি বর্ণনা করেন।’ -সহিহ মুসলিম

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা হজরত মুয়াবিয়া (রা.) মসজিদে একটি হালাকায় (বৈঠক, অধিবেশন) আসলেন। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কীসে তোমাদের এখানে বসিয়েছে? তারা বলল, আমরা আল্লাহর জিকির করতে বসেছি। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এ ছাড়া আর কিছু তোমাদের বসায়নি? তারা বলল, আল্লাহর কসম! এ ছাড়া অন্য কিছু আমাদের বসায়নি। তিনি বললেন, আমি তোমাদের প্রতি সন্দেহ পোষণ করে কসম করতে বলিনি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে আমার চেয়ে কম হাদিস বর্ণনাকারী কেউ নেই।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর একদল ভ্রাম্যমাণ বর্ধিত ফেরেশতা আছে। তারা জিকিরের মজলিসসমূহ অনুসন্ধান করে বেড়ায়। তারা যখন কোনো জিকিরের মজলিস পায় তখন সেখানে তাদের (জিকিরকারীদের) সঙ্গে বসে যায়। আর তারা একে অপরকে তাদের পাখা বিস্তার করে বেষ্টন করে নেয়। এমনিভাবে তারা তাদের ও নিকটবর্তী আসমানের ফাঁকা স্থান পূর্ণ করে ফেলে। জিকিরকারীরা যখন আলাদা হয়ে যায় তখন তারা আসমানে আরোহণ করে। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ তাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা কোথা থেকে এসেছ? অথচ তিনি তাদের সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত। তখন তারা বলতে থাকে, আমরা জমিনে অবস্থানকারী আপনার বান্দাদের কাছ থেকে এসেছি, যারা আপনার তাসবিহ পাঠ করে, তাকবির পাঠ করে, তাহলিল- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করে, হামদ পাঠ করে এবং আপনার কাছে চায়। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দারা আমার কাছে কী চায়? তারা বলেন, তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়। তিনি বলেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? তারা বলেন, না- হে প্রতিপালক! তিনি বলেন, যদি তারা আমার জান্নাত দেখতে পেত তাহলে কী করত? তারা বলেন, আর তারা আপনার কাছে পানাহ চাচ্ছিল। তিনি বলেন, কীসের থেকে তারা আমার কাছে পানাহ চাচ্ছিল? তারা বলেন, হে প্রতিপালক! আপনার জাহান্নাম থেকে। তিনি বলেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? তারা বলেন, না তারা দেখেননি। তিনি বলেন, যদি তারা জাহান্নাম দেখতে পেত তাহলে কী করত? তারা বলেন, আর তারা আপনার কাছে মাগফিরাত কামনা করছিল। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ বলবেন, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তারা যা চায় আমি তা তাদের দান করলাম। আর তারা যা থেকে আশ্রয় চায় আমি তা থেকে তাদের নাজাত দিলাম। এরপর তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের মধ্যে তো অমুক গোনাহগার বান্দা ছিল, যে মজলিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের সঙ্গে বসেছিল। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ বলবেন, আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম। তারা তো এমন একটি সম্প্রদায় যাদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি দুর্ভাগা হতে পারে না।’ -সহিহ মুসলিম

জিকিরের মজলিসের ফজিলত ও বরকতের অন্যতম হলো- যা হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো সম্প্রদায় যখন একত্র হয়ে আল্লাহর জিকির করে তাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে, তখন আসমান থেকে একজন আহ্বানকারী বলতে থাকেন, তোমরা ক্ষমাপ্রাপ্ত অবস্থায় ওঠো। তোমাদের পাপগুলোকে পুণ্যে পরিবর্তন করা হয়েছে।’ -মুসনাদে আহমাদ

আল্লাহু আকবার! এটা কত বড় সম্মান, ফজিলত, অনুগ্রহ ও দয়া যে তাদের বলা হবে, তোমরা ক্ষমাপ্রাপ্ত অবস্থায় ওঠো এবং তোমাদের পাপগুলোকে পুণ্যে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। যারা জিকির ও ইলমের মজলিসে গমন করে এবং মর্যাদাবান, ফকিহ (ইসলামি স্কলার) ও জ্ঞানীদের সঙ্গে ওঠাবসা করে; তাদের জন্য কতই না সুসংবাদ!

হজরত মুয়াজ (রা.) বলেন, ‘তোমরা ইলম শিক্ষা করো, কেননা ইলম শিক্ষা করা নেকির কাজ, তা অন্বেষণ করা ইবাদত, তা চর্চা করা তাসবিহ, তা অনুসন্ধান করা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ, তা বিতরণ করা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম এবং যারা জানে না তাদের শিক্ষা দেওয়া সদকাস্বরূপ।’

হে মুসলিমরা! আপনারা গাফিলতি, রঙ্গ-তামাশা ও লাঞ্ছনার মজলিস পরিহার করুন এবং ফাসেক, দুশ্চরিত্র ও পাপাচারীদের বিচরণস্থল থেকে দূরে থাকুন। সেখানে গমনকারী মাত্রই তন্দ্রাচ্ছন্ন মনোবৃত্তি, দুর্ভাগ্য ও অবনত মস্তকে প্রত্যাবর্তন করে; দুনিয়ায় লাঞ্ছনা ও আখেরাতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা কোনো মজলিসে বসার পর আল্লাহর জিকির ছাড়া সেখান থেকে চলে যায়, তারা যেন মৃত গাধার মতো উঠে গেল। কেয়ামতের দিন তাদের এ বৈঠক আফসোসের কারণ হবে।’ -সুনানে আবু দাউদ

হে আল্লাহ! আমাদের গাফিলতির নিদ্রা ও তন্দ্রা থেকে জাগিয়ে তুলুন এবং এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা কথা শোনে ও এর সর্বোত্তমটি অনুসরণ করে।

৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার, মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবা। অনুবাদ- মুহাম্মদ আতিকুর রহমান

প্রিয় পোষ্ট সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন


আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন
বান্দার যে কর্মের ফলে বৃষ্টি বন্ধ করে দেন আল্লাহ
জানা গেল ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ
ঈদুল ফিতরে করণীয়
ফিতরা কী, কেন, কাকে দেবেন, কোন সময় এবং কীভাবে দেবেন?
বায়তুল মোকাররমে ঈদের ৫ জামাত
হাজীগঞ্জ বড় মসজিদে জুমাতুল বিদার নামাজে লাখো মুসল্লীর অংশগ্রহণ

ইসলাম এর আরও খবর

সম্পাদক: অধ্যাপক মোঃ শাহাদাত হোসেন, প্রধান সম্পাদক: জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়, প্রকাশক: আবু সাঈদ ইকবাল মাসুদ সোহেল, মিডিয়া ভিশন লন্ডন থেকে প্রকাশিত।   ঢাকা কার্যালয় (অস্থায়ী): শহীদ ভিলা, বাসা- ২৫, কাঠালবাগান, গ্রীনরোড, ঢাকা-১২০৫