চাঁদপুরের শাহরাস্তির ঐতিহ্যবাহী খিলাবাজার স্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণীর মানসিক ভারসাম্যহীন এক শিক্ষার্থীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক , ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।
বুধবার, ২২ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসময় লিখিত বক্তব্যে খিলাবাজার স্বুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোশাররফ হোসেন জানান, খিলাবাজার স্কুল এন্ড কলজের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জানাতুল নাঈম নিঝুম,(রোল-৭১) পিতাঃ নজরুল ইসলাম, মাতাঃ মুকছুদা বগম, গ্রামঃ বেরকী (মজুমদার বাড়ী)। সে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। তারপর থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদর সাথে অশোভন আচরন.মারধর, ইট-পাটকেল ছাড়া, থুথু নিক্ষেপ, বই, কাগজ- কলম ছিনিয়ে নেয় নিত মেয়েটি। শিক্ষক ও ছাত্রদের জড়িয়ে ধরার সাথে মারধর করে, হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্হানে কামড় দেয়া, পরনের কাপড় টানা-হিছড়া,ছিড়ে ফেলা, প্রেমের প্রস্তাব দেয়া,বিয়ের প্রস্তাব দেয়া,উশৃঙ্খল আচরন করাই ছিল তার নিত্য নৈমিত্ত বিষয়। বিভিন্ন ক্লাস কক্ষে ঢুকে শিক্ষকদের পাঠদানে বাধা,গালমন্দ,ব্যাগ নিয়ে টানাহেচড়াঁ, শিক্ষকদের ক্লাস থেকে বের করে দেয়া, বিদ্যালয়ের আশপাশের দোকান থেকে মালামাল নিয়ে আসা, গালমন্দ করা, দোকানদারদের মারধর করা ও ছিল তার প্রতিদিনের কাজ। এ সকল বিষয়ে শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা তার অভিভাবকদের সাথে একাধিকবার আলাপ- আলোচনা করলে ও তারা ঐ শিক্ষার্থীর চিকিৎসার অজুহাতে কালক্ষেপন করছেন। তার অস্বাভাবিক এ আচরনে এ প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি , ৫০ জন শিক্ষক কর্মচারীর মানসন্মান আজ হুমকীর সম্মুক্ষীন। গত ১৪ মার্চ মানসিক ভারসাম্যহীন শিক্ষাথী জানাতুল নাঈম নিঝুম, বিদ্যালয়ের প্রাত্যহিক সমাবেশে অংশ নেয়। কিছুক্ষন পর তার চাচা এস তাকে নিয়ে যায়। দুপুর ২ টায় এ শিক্ষার্থী তার শ্রেণীকক্ষের সামনে গিয়ে শিক্ষকের কাছে ক্লাসে প্রবেশের অনুমতি চায়।শিক্ষক কাউছার আলম তাকে ক্লাসে প্রবেশ করতে না দেয়ায়, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে গালমন্দ ও উদ্ভট আচরন করে মেয়েটি। বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মাহবুব আলম, ডাঃ মাহফুজুর রহমান কে জানানো হয়। সদস্যরা বিষয়টি তার অভিভাবককে জানানোর জন্য বলল।তার বাবা প্রবাসী হওয়ায় তার মাকে আমরা বিষয়টি অবহিত করলে তার মা বললো দয়া করে নিঝুমকে একটি সিএনজি যোগ বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তার মা আরা জানায়, সে বাড়ী থেকে আসার সময় আমাকে ঘরে রেখে বাহির থেকে তালা লাগিয়ে এসেছে। তার মায়ের অনুরাধে শিক্ষার্থী নিঝুমকে বিদ্যালয়ের আয়া মায়া রাণীর মাধ্যমে বাড়ীতে পৌঁছানো হয়। আয়া মায়া রাণীর ভাষ্যমতে, নিঝুমের মা নিঝুমকে ঐ দিন বেদম মারধর করে। তিনি আরা জানান, তার মায়ের এ মারধরর ঘটনা একটি কুচক্রীমহল ঘটনাটি ভিন্নদিকে প্রবাভিত করে শিক্ষক কাউছার আলম ও মজিবুর রহমানের উপর দোষ ফেলছেন।
শিক্ষকরা তাক বেদম মারধর করছেন মর্মে উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযাগ ও করছেন।সেইসব কুচক্রীমহল এ মিথ্যা বানায়াট তথ্য উপনস্হাপন করে কিছু গনমাধ্যমকর্মীদর দিয় অনলাইন নিউজ পোটার্ল ও মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার করছেন। যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক বিষয় মাত্র। তিনি বলেন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও মানসিক সমস্যায় ভোগাক্রান্ত নিঝুমকে অসুস্হতার অস্বাভাবিক আচরনের কারণে গভর্নিং বর্ডির অধিবেশন নং ০৬/২৩, তাং ৩১/০১/২০২৩ ইং তাকে বিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া ১৬/০২/২৩ ইং অভিভাবকের নিকট নোটিশ প্রেরণ করা হয়।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মাহবুব আলম বলেন, মেয়েটি মানসিক ভারসাম্যহীন । তার বিষয় অনেক বৈঠক করা হয়েছে। তার অভিভাবরা তাকে বারবার চিকিৎসার কথা বলে কোন সুরাহা করেননি। পরবর্তীত আমরা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাকে ছাড়পত্র দেই।
ম্যানেজিং কমিটির অন্য সদস্য ডাঃ মাহফুজুর রহমান বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন এবং প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র দেয়া এ শিক্ষার্থীক নিয়ে একটি পক্ষ মিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচারে নেমেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষকরা অত্যান্ত সুনাম, দক্ষতার সহিত প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছেন।এ শিক্ষকদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা দুঃখজনক! এটি পরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ।
এ বিষয় শিক্ষক কাউছার আলম বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকেই মানসিক বিকৃত নিঝুমের ক্লাস শিক্ষক আমি। প্রতিনিয়তই তার বেফাঁস প্রস্তাব, শিক্ষার্থীদের সাথে গালমন্দ,অসাদাচারনে সবাই অতিষ্ঠ হয় পড়েছি। ১৪ই মার্চ দুপুর সে শ্রেণীকক্ষের সামনে আসল। ক্লাসে প্রবেশের অনুমতি না দেয়ায়, সে আমার সাথে অস্বাভাবিক আচরন করে।পরে আমি তাকে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অন্য শিক্ষকদের নিয়ে বাড়ী পাঠানোর ব্যবস্হা করি। এ বিষয়টিকে একটি মহল তাক মারধর করছি মর্মে প্রচার করছে, যাহা মিথ্যা ভিত্তিহীন যড়যন্ত্রমূলক।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মজিবুর রহমান জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন এ শিক্ষার্থী ক্লাসে না প্রবেশ করতে না পেরে গালমন্দ করলে আমি বিদ্যালয়ের আয়া মায়া রানীর মাধ্যমে তাকে বাড়ীতে পাঠানার ব্যবস্হা করি।এ ঘটনায় আমি তাকে বেত্রাঘাত করছি বলে প্রচার করা হয়েছে। যাহা মিথ্যা ও অপপ্রচার মাত্র।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীণ অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযাদ্ধা আবদুল মানান বিএসসি বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন এ শিক্ষার্থীকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্রমূলক অপরাজনীতি ও অপপ্রচার করছে তাদের ছাড় দেয়া হবেনা। তিলতিল করে প্রতিষ্ঠানটি আজ এ অবস্হানে পোঁছেছে।যারা এ প্রতিষ্ঠানের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি করতে চায় তাদের কঠিন হস্তে প্রতিহত করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক ও রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ডাঃ নিমাই চদ্র পাল জানান, এ প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে আমি অংশগ্রহণ করি।অনুষ্ঠানে আসলে দেখতাম এ মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটি স্টেজে উঠে অহেতুক মাইক নিয়ে টানাটানি করতো। কেউ না বললে ও নিজে নিজে গান গাইতো, কবিতা বলতো।পরে শিক্ষকদের সাথে আলাপকালে জানলাম,আসলে মেয়েটি মানসিক ভারসাম্যহীন।
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সাথে তার অশোভন আচরন দীর্ঘদিনের বিষয়।যার কারণে বিদ্যালয় থেকে নিঝুমকে ছাড়পত্র দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।