নিজস্ব প্রতিনিধি
দেশে ধীরে ধীরে কমে আসছে বেকারত্বের হার। ২০২৩ সাল শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ লাখ ৬০ হাজার, যা মোট জনসংখ্যার অনুপাতে ৩.৩৫ শতাংশ। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৮০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরে বেকার কমেছে ১ লাখ ২০ হাজার। পাশাপাশি বেড়েছে আয়। ২০২৩ সালে কর্মকর্তা পর্যায়ে মাসিক আয় ছিল ৩৩ হাজার ৮৬৮ টাকা এবং কর্মচারীদের ছিল ৯ হাজার ৩০১ টাকা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩-এর প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে ১৫ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সি বেকার জনসংখ্যা প্রাক্কলন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী বেকার মানুষের হিসাব করে বিবিএস। আইএলওর সংজ্ঞা অনুযায়ী, ৩০ দিন ধরে কাজপ্রত্যাশী একজন মানুষ যদি সর্বশেষ সাত দিনে মজুরির বিনিময়ে ১ ঘণ্টাও কাজ করার সুযোগ না পান, তাহলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই সংজ্ঞা ঠিক নয়। বাংলাদেশের পরিবেশ ভিন্ন। অর্থাৎ প্রকৃত বেকারত্ব আরও বেশি বলে মত তাদের।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৩ সাল শেষে দেশে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৬০ হাজার জন। এর মধ্যে বেকার পুরুষ রয়েছে ১৬ লাখ ৪ হাজার, আর বেকার নারী ৮ লাখ ২০ হাজার। তবে শহরের তুলনায় গ্রাম এলাকায় বেকারত্ব বেশি। গ্রাম এলাকায় বেকার জনগোষ্ঠী ১৬ লাখ ৬০ হাজার এবং শহরে এ ধরনের বেকার জনগোষ্ঠী ৮ লাখ।
জনসংখ্যার অনুপাতে দেশে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। নারীদের বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ, যা প্রায় পুরুষদের বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৪১ শতাংশের সমান।
জরিপে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের যুব হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। জরিপের ফল অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে মোট যুব শ্রমশক্তি ২ কোটি ৬৭ লাখ ৬০ হাজার। এ যুব জনগোষ্ঠীর মধ্যে পুরুষ ১ কোটি ৩৬ লাখ আর নারী ১ কোটি ৩১ লাখ ৬০ হাজার।
এতে উঠে এসেছে, মোট শ্রমশক্তির মধ্যে যুব শ্রমশক্তি ৩৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। যুব শ্রমশক্তি গ্রাম এলাকায় ৩৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৩০ দশমিক ১২ শতাংশ।
যুব শ্রমশক্তির মধ্যে ২ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার যুবকর্মে নিয়োজিত ছিল, যাদের মধ্যে পুরুষ ১ কোটি ২৩ লাখ ও নারী ১ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার। যুব শ্রমশক্তির মধ্যে ২৪ লাখ ৬০ হাজার যুব বেকার, যেখানে পুরুষ ১৬ লাখ ৪০ হাজার এবং নারী ৮ লাখ ২০ হাজার
আয় ও কর্মঘণ্টা
জরিপে বলা হয়েছে, দেশের কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা সপ্তাহে গড়ে কাজ করেন ৪৭ ঘণ্টা। তবে এটি শিল্পকারখানায় কাজ করা কর্মীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি, সপ্তাহে গড়ে ৫৩ ঘণ্টা। কৃষি খাতে গড় কর্মঘণ্টা সবচেয়ে কম, ৩৮ এবং সেবা খাতে গড় কর্মঘণ্টা ৫১। গ্রাম ও শহরের কর্মঘণ্টায়ও তফাত অনেক। গ্রামে কর্মে নিয়োজিতদের গড় কর্মঘণ্টা ৪৫ এবং শহরে সপ্তাহে ৫১ ঘণ্টা।
শ্রমশক্তি জরিপে বলা হয়েছে, কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা শুধু বেতন বা মজুরির বিনিময়ে কর্মরত, তাদের গড় মাসিক আয় ১৩ হাজার ৮৬৫ টাকা। এর মধ্যে পুরুষরা আয় করে ১৪ হাজার ৪৮৯ এবং নারীরা ১০ হাজার ৮৩১ টাকা।
স্তরভেদে এ বেতনের কাঠামো আলাদা। এতে বলা হচ্ছে, যারা ব্যবস্থাপক বা কর্মকর্তা পর্যায়ে রয়েছেন, তাদের বেতন কর্মীদের তুলনায় অনেক বেশি। ব্যবস্থাপক বা কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োজিত ব্যক্তিদের গড় মাসিক আয় সবচেয়ে বেশি ৩৩ হাজার ৮৬৮ এবং সর্বনিম্ন প্রাথমিক পেশা ব্যক্তিদের ৯ হাজার ৩০১ টাকা। শহরাঞ্চলে বেতন বা মজুরির বিনিময়ে কর্মরতদের গড় মাসিক আয় ১৫ হাজার ৯০৩ এবং গ্রাম এলাকায় তা ১২ হাজার ৫৬৬ টাকা।
শহরের ৪৮ শতাংশ মানুষ ভাড়া থাকে
প্রতিবেদনে বাড়ির মালিকানার বিষয়ে বলা হয়, পল্লী এলাকায় মোট ৯২.০৬ শতাংশ বাসস্থান নিজস্ব মালিকানাধীন, যা পল্লী এলাকায় পরিবারের মধ্যে সম্পত্তির মালিকানা এবং স্থিতিশীলতার চিত্র প্রকাশ করে। বিপরীতে শহর এলাকায় মাত্র ৪৯.১৬ শতাংশ বাসস্থান নিজস্ব মালিকানাধীন এবং ৪৭.৯৮ শতাংশ বাসস্থান ভাড়ায় রয়েছে। ভাড়ামুক্ত বাসস্থান উভয় এলাকাতেই অপেক্ষাকৃত কম, পল্লী এলাকায় ৩.২১ শতাংশ এবং শহর এলাকায় যা ২.৮৬ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে বাসস্থানের মোট বিন্যাস থেকে দেখা যায়, ৭৮.৯৫ শতাংশ বাড়ি নিজস্ব মালিকানাধীন, ১৭.৯৫ শতাংশ ভাড়ায় এবং ৩.১ শতাংশ ভাড়ামুক্ত।
পুরুষপ্রধান পরিবার বেশি
সাধারণত দেশে বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষপ্রধান খানা বেশি পাওয়া যায়। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বলছে, দেশে পুরুষপ্রধান খানা রয়েছে ৮৫.২৯ শতাংশ এবং নারীপ্রধান খানা ১৪.৭১ শতাংশ। পল্লী এলাকার ১৪.৪১ শতাংশ নারীপ্রধান পরিবার এবং শহরে ১৫.৪১ শতাংশ নারীপ্রধান পরিবার।
রান্নায় জ্বালানির উৎস
পল্লী এলাকায় প্রধানত প্রচলিত জ্বালানি ব্যবহার হয়। যেখানে ৫০.৬৮ শতাংশ খানা কাঠ বা জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে এবং ৩৯.৫ শতাংশ খানা গোবর, পাতা বা খড়ের ওপর নির্ভর।
শহর এলাকায় ৬৩.৭৬ শতাংশ খানা প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলপি গ্যাস ব্যবহার করে, যা আধুনিক জ্বালানি উৎসগুলোর সহজলভ্যতাকে প্রকাশ করে। মাত্র ৯.৭৬ শতাংশ পল্লী খানা প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলপি গ্যাস ব্যবহার করে, যা জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পল্লী ও শহর এলাকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নির্দেশ করে। অন্যান্য জ্বালানি উৎস যেমন: কেরোসিন, বিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস উভয় স্থানেই নগণ্য পরিমাণে ব্যবহার হয়। সামগ্রিকভাবে দেশব্যাপী ৪৩.৩৭ শতাংশ খানা কাঠ বা জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে, ৩০.০৬ শতাংশ গোবর, পাতা বা খড় ব্যবহার করে এবং ২৬.২৬ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলপি গ্যাস ব্যবহার করে।