আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আজ রোববার শেষ হবে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। চার দিন বিরতি দিয়ে ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব (সাদপন্থী) অনুষ্ঠিত হবে।
শনিবার বয়ান-তাশকিল, তালিম-তরবিয়ত, ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে কেটেছে এ ইজতেমার দ্বিতীয় দিন। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মনোবাসনায় নিজের ঈমান, আমল ও আখলাককে পরিপূর্ণ শুদ্ধরূপে গড়ে তুলতে বয়ান শুনছেন মুসল্লিরা। ধুলা, ময়লা, শীত, বৃষ্টিসহ নানা প্রতিকূলতা উপক্ষো করে সবারই মনোযোগ আলেমদের বয়ানের দিকে।
দেশ-বিদেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কণ্ঠের আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে মুখর হয়ে যেন পরিণত হয়েছে এক ধর্মীয় নগরিতে। প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে ঈমান, আমল, আখলাক ও দ্বিনের পথে মেহনতের ওপর আমবয়ান অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে দেশ-বিদেশ থেকে আগত মুরুব্বিরা তাবলিগের ছয় ওছুলের মধ্যে দাওয়াতে দ্বিনের মেহনতের ওপর গুরুত্বারোপ করে বয়ান করেন।
রোববার সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে ইজতেমা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম। তবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বি বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে ইজতেমা আয়োজক সূত্রে জানা গেছে।
ইজতেমা ময়দানে বিদেশি নিবাসের পূর্বপার্শ্বে বিশেষভাবে স্থাপিত মঞ্চ থেকে এ মোনাজাত পরিচালনা করা হবে। এতে প্রায় ৫০ লাখ দেশি-বিদেশি মুসল্লি অংশ নেবেন বলে ইজতেমার আয়োজকরা ধারণা করছেন। মোনাজাতের আগে বিশেষ হেদায়াতি বয়ান করা হবে।
আখেরি মোনাজাত ও প্রস্তুতি
আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে বিপুলসংখ্যক নারী টঙ্গীর আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকে তাদের আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে উঠেছেন। এদিকে ইজতেমা ময়দান পরিপূর্ণ হয়ে হাজার হাজার মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ পথের দুই পাশে ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছেন। ধুলা-বালি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তারা খাওয়া দাওয়া ও ঘুমাচ্ছেন। ইজতেমার আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করবেন বলে জানান।
বয়ান করেছেন যারা
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে শনিবার বাদ ফজর মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান, তার বয়ান বাংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা। বাদ আসর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাসান। বয়ানের তর্জমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা জাকারিয়া। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। বাদ আসর যৌতুক বিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ব ইজতেমায় ৭২টি যৌতুক বিহীন বিয়ে
বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম পর্বে ৭২টি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে শনিবার বাদ আসর ইজতেমাস্থলে বয়ান মঞ্চের পার্শ্বে হজরত ফাতেমা (রা.) ও হজরত আলী (রা.) বিয়ের দেনমোহর অনুসারে বিনা যৌতুকের বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাসান যৌতুকবিহীন বিয়ে পরিচালনা করেন। এর আগে বিয়ের জন্য বর ও কনে পক্ষের লোকদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়। বিয়ের পূর্বে বাদ আসর বিয়ের খুতবা প্রদান করা হয়। বয়ান শেষে এই সকল বর-কনের অভিভাবকদের সম্মতিতে বরের উপস্থিতিতে বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ে শেষে উপস্থিত দম্পতিদের স্বজন ও মুসল্লিদের মধ্য খোরমা খেজুর বিতরন করা হয়। বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিদেশি অতিথি
শনিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ৪৯টি দেশের বিদেশি মুসল্লি এসেছেন ২ হাজার তিনশত চারজন। এর মধ্যে উর্দু খিমায় আগত বিদেশি মুসল্লি ৭শত ৫০ জন। ইংলিশ খিত্তায় ৭শত ৭৬ জন। আরব খিমায় ২ শত ৪২ জন। বাংলা খিমায় ৫ শত ৩৬ জন।