সরকারের কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ করে’ জামালপুরের প্রভাবশালীরা বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অবৈধ ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন কিছু অভিযান চালালেও তা কোনো কাজে আসছে না। জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, কিংবা সরকারি কোনো ধরনের অনুমোদন নেই এমন ইটভাটাই বেশিরভাগ। শহরের আবাসিক এলাকা, রাস্তার পাশে, উর্বর ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে এসব ভাটা। অপরিকল্পিত এসব ভাটা নষ্ট করছে পরিবেশের ভারসাম্য, রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
জেলা প্রশাসনের ব্যবসা-বাণিজ্য শাখা ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর সদর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, সরিষাবাড়ী ও বকাশিগঞ্জ উপজেলায় অন্তত ১১০টি ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ১২টির। বাকি ৯৮টি ভাটা কীভাবে কোন আইনে চলছে তার কোনো উত্তর নেই পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসনের কাছে। তবে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বরাবরের মতোই বলছেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।
জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা এলাকার আব্দুস সাত্তার বলেন, ইট পোড়ানোর সময় হলেই ফসলি জমি থেকে মাটি কেনার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় ভাটামালিকদের মধ্যে। ফলে ফসলি জমির পরিমাণ দিনে দিনে কমতে শুরু করেছে। ফসলি জমির মাঝখানে ইটভাটার কারণে ফসলও আগের থেকে অনেক কম হয়। জহুরুল ইসলাম নামে একজন বলেন, এসব ইটের ভাটার জন্য ফসলসহ বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা হয়। কিন্তু ভাটামালিকরা অনেক শক্তিশালী হওয়ার কারণে আমরা কিছুই করতে পারি না। ভাটা থেকে ইট বের করার পরই শুরু হয় আরেক যন্ত্রণা। ইট পরিবহনের গাড়ির প্রচণ্ড শব্দে বাড়িঘরে থাকাই কষ্টকর হয়ে যায়। আর ধুলোর তো সীমা নেই। সেসব গাড়ি দিয়ে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দেখেও প্রশাসন নীরব থাকে। জাহিদ হাসান স্বপন নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, এসব অবৈধ ভাটা কার শক্তিতে চলছে তা জানি না। তবে এসব দ্রুততম সময়ের মধ্যে বন্ধ না করা গেলে আশপাশের পরিবেশে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।
জামালপুর পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন বা উপজেলা প্রশাসন কালেভদ্রে অভিযান পরিচালনা করে। যা লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি ভাটা চালু করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অভিযান চালানো হয় তাহলে এসব অবৈধ ভাটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর গতানুগতিক বক্তব্য দিয়েছে। জামালপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সুকুমার সাহা বলেন, ‘এ জেলায় ১১০টি ইটভাটা থাকলে ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ১২টির। অবৈধ ইটভাটা মালিকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’ জামালপুর জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমানের বক্তব্যও মোটামুটি একই রকম। তিনি বলেন, ‘ইটভাটাগুলো যেন লাইসেন্স নিয়ে ভাটা পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করব। তারপরও যারা লাইসেন্স না নিয়ে ও সরকারের সংশ্লিষ্ট আইন না মেনে ভাটা পরিচালনা করবেন তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’