মোঃ হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে ছাত্রী নিঝুম এর অত্যাচারের পরিস্থিতি নিয়ে খিলাবাজার স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ প্রতিবাদ সমাবেশ সড়ক অবরোধ, উপজেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপি প্রদান করে। সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ ফিরিয়ে পাওয়া এবং শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার জন্য আবেদন করে ওই বিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থী মাহবুবা আক্তার, খালেদ মাহমুদ,মরিয়ম আক্তার স্বাক্ষরিত একটি আবেদন পত্র উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে প্রেরণ করে। তারপর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। এদিকে এ ঘটনায় বুধবার দিনব্যাপী শাহরাস্তি উপজেলার হোসাইন আহম্মেদ সড়কের খিলাবাজার চৌরাস্তায় স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। পরে ওই প্রতিবাদ সমাবেশে স্থানীয় চেয়ারম্যান আ: রাজ্জাক, উক্ত স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোঃ মনিরুজ্জামান পাটোয়ারী, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক , মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান, সহ বিশিষ্টজন ,ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ মোশারফ হোসেন মিয়া এতে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত রেখে বিষয়টি উপজেলা ইউএনও মোহাম্মদ হুমায়ুন রশীদ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট তুলে ধরার আহবান জানান।
ওই সময় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নিঝুম এর বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দিয়ে সড়কবন্ধ করে দেয় ছাত্র-ছাত্রীরা। এই সংবাদের ভিত্তিতে শাহরাস্তি খিলা পুলিশ ফাঁড়ির এস আই মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন। পরে শাহরাস্তি থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত খায়রুল আলম ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থী স্কুল এন্ড কলেজে কর্তৃপক্ষ, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোঃ মনিরুজ্জামান পাটোয়ারী, জনপ্রতিনিধি, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গের উপস্থিতে একটি সমঝোতা বৈঠক করেন। পরে শিক্ষার্থীরা বৈঠকের আলোচনায় আশ্বস্ত হয়ে একটি স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার,শাহরাস্তি থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ শহীদ হোসেনের নিকট পৌঁছে দেয়।
সংশ্লিষ্ট স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, ২০২৩ সালের গত ২২ মার্চ ওই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোশাররফ হোসেন তার অফিস কক্ষে গণমাধ্যমের নিকট সৃষ্ট পরিস্থিতি তুলে ধরে জানান বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জানাতুল নাঈম নিঝুম, রোল-৭১ পিতা: নজরুল ইসলাম, মাতা: মুকছুদা বেগম, গ্রাম: বেরকী মজুমদার বাড়ী । সে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির পর থেকেই শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরন.মারধর, ইটা-পাথর , থুথু নিক্ষেপ, বই, কাগজ- কলম ছিনিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ঘটনা রচনা সৃষ্টি করে আসছে। একপর্যায়ে ওই অশোভন আচরণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে অভিযুক্ত নিঝুম শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে ধরা, কামড়িয়ে দেওয়া,পরনের কাপড় ছিড়ে ফেলা, পাঠদানে বাধা, গালমন্দ করা, মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া, দোকানপাট থেকে নিজের ইচ্ছায় মালামাল নিয়ে আসা দোকানিকে মারধোর করে বিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়ে উঠে তার নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ওই উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা ওই তার অভিভাবকের সাথে একাধিকবার মিটিংয়ে মিলিত হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, নিঝুম বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও মানষিক সমস্যায় জনিত কারনে গভর্নিং বর্ডির অধিবেশন নং ০৬/২৩, তাং ৩১/০১/২০২৩ ইং তাকে বিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া ১৬/০২/২৩ ইং অভিভাবকের নিকট নোটিশ প্রেরণ করা হয়।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মাহবুব আলম জানান, মেয়েটি মানুষিক ভারসাম্যহীন । রায়শ্রী দক্ষিন ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি ডাঃ নিমাই চদ্র পাল বিদ্যালয়ের প্রতিটি কাজে যুক্ত রয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন আমি যখন এই প্রতিষ্ঠানটিতে আসি এই শিক্ষার্থীর নিঝুমের অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করেছি। এই প্রসঙ্গে ওই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে ইন্টার পর্যন্ত সকল ক্লাসের শিক্ষার্থীদের অভিমতে জানা যায়, ওই শিক্ষার্থী নিঝুমের ভারসাম্যহীন আচরণের শিকার কেউ না কেউ কোন না কোন ভাবে হয়েছেন। এ বিষয় শিক্ষক কাউছার আলম জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকেই শিক্ষার্থী নিঝুমের শ্রেণি শিক্ষক আমি। শুরু থেকেই তার অসলগ্ন আচরণ, অশোভন বক্তব্য, শিষ্টাচার বহির্ভূত প্রস্তাব, সঙ্গের শিক্ষার্থীরা ও আমি পরিচিত। গত ১৪ই মার্চ দুপুর সে শ্রেণীকক্ষের সামনে এসে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। শিক্ষক তাকে ক্লাসে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ায় বিষয়টিকে তাকে প্রহার করা হয় মর্মে একটি মহল গুজব রটায়। একই অভিযোগে অভিযুক্ত আরেক সিনিয়র শিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন তাকে আমি মারধর করেছি বলে অভিযোগ তুলে। এ শিক্ষার্থী নিঝুমের মা মকসছুদা আক্তার (৩৫) বাদী হয়ে ১জন শিক্ষকের নামে ধর্ষণের চেষ্টার মামলা, ২ জন শিক্ষক ও ৩ জন পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক সহ ৭ জনের নামে মোট ৩ টি মামলা দায়ের করে। যা বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এদিকে এ বিষয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ মোশারফ হোসেন মিয়া বলেন, গত ২-৩ দিন ধরে ওই শিক্ষার্থী নিঝুম আবারো স্কুলে প্রবেশ করে পূর্বের ন্যায় একই ঘটনা ঘটাতে শুরু করে। পরবর্তীতে তাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি শান্ত করতে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়িতে পাঠাবার চেষ্টা করে। কিন্তু সে ওই বাধা অতিক্রম করে সবাইকে আক্রমণ করে আহত করার চেষ্টা করে। যা বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ নিকট ভিডিও আকার ধারণ রয়েছে। তিনি আরো বলেন ওই শিক্ষার্থীর এমন আচরণ দুঃখজনক। আমরা চাই সমস্যাটি দ্রুত সমাধান হোক।