১৯২৯ সালে বিজ্ঞানীরা একটি বিষয় খেয়াল করেন যে, ছায়াপথগুলো ক্রমশ পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অনেক দূরের কিছু কিছু সুপারনোভা আগে যে স্থানে ছিল, এখন আর সেই আগের জায়গায় নেই। অর্থাৎ মহাবিশ্ব ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। শুধু যে তাদের স্থান পরিবর্তিত হচ্ছে তা-ই নয়, বিজ্ঞানীরা আরও খেয়াল করলেন ধীরে ধীরে এই জায়গা পরিবর্তনের গতিও বাড়ছে। মহাশূন্যের এই দ্রুত সম্প্রসারণ কিন্তু অভিকর্ষের প্রভাবে কমে যায়নি, যেমনটা সবাই ধারণা করেছিল, বরং তা বেড়েছে। কেউ জানত না কেন এমনটি ঘটছে, কিন্তু এটা নিশ্চিত যে- এর পেছনে কিছু একটা রহস্য আছে। কোনো গবেষকই এখন পর্যন্ত এই সম্প্রসারণের সঠিক ব্যাখ্যা জানেন না, কিন্তু তারা এই সমাধানের একটি নাম দিয়েছেন। যাকে বলা হয় ‘ডার্ক এনার্জি’। ‘ডার্ক এনার্জি’ সম্পর্কে ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অবলম্বনে বিস্তারিত জানাচ্ছেন জামিউর রহমান
ডার্ক এনার্জি কী?
‘ডার্ক এনার্জি’ কী, তা কীভাবে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে, এ নিয়ে ১৯৯৮-এর ৯ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দু’টি দল প্রথম জোরালোভাবে আলোকপাত করেন। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গবেষক তাদের গবেষণায় এ বিষয়ে সর্বাধিক আলোকপাত করেছেন বলে দাবি উঠেছে। প্রসঙ্গত, এক শতাব্দীরও আগে আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বের অবতারণার সময় প্রথম ‘ডার্ক এনার্জি’র ধারণা দিয়েছিলেন। নানা সমীকরণে তিনি বুঝেছিলেন, এই মহাবিশ্ব ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে অথবা প্রসারিত হচ্ছে। অভিকর্ষের তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে আইনস্টাইন তার সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সমীকরণে একটি ধ্রুবকের আশ্রয় নেন। ধ্রুবকটির নাম ‘কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট’। গ্রিক অক্ষর ল্যামডা দিয়ে একে চিহ্নিত করেছিলেন তিনি। পরে অবশ্য দুই বিজ্ঞানী হেনরিটা সোয়ান লেভিট এবং এডউইন হাবল গবেষণায় প্রমাণ করেন, মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হয়ে চলেছে। তখন এই সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের ধারণার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আইনস্টাইন তার সমীকরণ থেকে ল্যামডাকে সরিয়ে দেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, বিজ্ঞানী হিসেবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ‘কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট’।
১৯৯৮ সালে বিজ্ঞানীদের দুই দল প্রমাণ করেন, এই বিশ্ব ক্রমাগত প্রসারণশীল। তার ফলে আজকের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ফিল্ড সমীকরণ থেকে বাদ পড়া সেই ‘কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট’-এর মাধ্যমেই ডার্ক এনার্জির সবচেয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। নক্ষত্রপুঞ্জের ক্রমাগত বিস্ফোরণ ও তা থেকে বিচ্ছুরিত রশ্মির পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই ‘ডার্ক এনার্জি’র পরিমাপের চেষ্টা করছেন বর্তমানের বিজ্ঞানীরা। বিভিন্ন মহাদেশের অন্তত ৪০০ বিজ্ঞানী এই গবেষণায় যুক্ত। তবে ‘ডার্ক এনার্জি’র উৎস নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি। এ ব্যাপারে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। অনেকের মতে, মহাশূন্যের অসীম শূন্যতার মাঝে সব সময় যে ‘কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন’ বা কোয়ান্টাম শক্তির রূপান্তর ঘটে চলেছে, তার ফলে ‘ডার্ক এনার্জি’র সৃষ্টি হচ্ছে। যদিও এর সপক্ষে এখনও তেমন কোনো জোরদার প্রমাণ নেই। ফলে ‘ডার্ক এনার্জি’র রহস্য এখনও পর্যন্ত অধরাই রয়ে গেছে।