ধান উৎপাদন জেলা হিসেবে বেশ পরিচিত নেত্রকোণা। তবে, বর্তমানে এ জেলায় দিন দিন বাড়ছে সবজি চাষ। ধানের থেকে সবজি চাষে কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এ পেশায় ঝুঁকছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে এ জেলায় যে সবজি উৎপাদন হবে তার আনুমানিক বাজার মূল্য ৬০০ কোটি টাকা।
প্রতিবছর বোরো মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ধানের উৎপাদন হয় এ জেলায়। তবে আগাম বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবারই লোকসান করতে হয় কৃষকদের। তাই অনেকেই ধান ছেড়ে বেছে নিয়েছেন সবজি চাষ।
জেলার সদর উপজেলার কয়লাটি ইউনিয়নের কৃষক জয়নাল মিয়া এবার প্রায় ২০ শতক জমিতে টমেটোর চাষ করেছেন। এবার চাষের সব খরচ মিটিয়ে হিসাব দাঁড়াবে ২০ হাজারে, যা গতবারের চেয়ে অনেক বেশি। উৎপাদন খরচ বাড়ায় কেজিপ্রতি টমেটো ৫০ টাকার উপরে বিক্রি করতে হবে তার।
চলতি বছর জেলায় মোট ৭ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয় টমেটো। সবমিলিয়ে শুধু টমেটো চাষেই বীজের প্রয়োজন হয়েছে ১৬০ কেজি। যার বাজার মূল্য এক কোটি টাকার উপর।
টমেটো ছাড়াও চলতি মৌসুমে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিমসহ অন্তত ২০ প্রকার সবজির আবাদ করেছেন কৃষকরা। এ বছর কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) টমেটো, মিষ্টি কুমড়াসহ কিছু সবজির দেশেও বীজ সরবরাহ করেছে। যা জেলার মোট চাহিদার মাত্র এক শতাংশ। তাই সবজি চাষে বীজের চাহিদা মেটায় হাইব্রিডসহ বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানিগুলো।
প্রতি মৌসুমে জেলায় সবজি চাষে অন্তত বীজের প্রয়োজন হয় ৩০ মেট্রিক টন। মান ভেদে এই বীজের বাজার দাঁড়ায় প্রায় ৪০ কোটি টাকায়। এছাড়াও আগাছা দমন, বালাইনাশক, ভিটামিনসহ কীটনাশকের পেছনে কৃষকদের খরচ করতে হয় আরো ৬০-৭০ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে এক মৌসুমেই বীজ ও কীটনাশকের পেছনে খরচ দাঁড়ায় ১১০ কোটি টাকা। এছাড়াও এ মৌসুমে জেলায় প্রায় ৭ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি থেকে এক লাখ ৮৪ হাজার ৩৩১ মেট্রিক টন সবজির উৎপাদন হবে। যা বিক্রি হবে অন্তত ৬০০ কোটি টাকায়।
কৃষিবিদ শ্যামল রায় জানান, রবি মৌসুমের সবজি বীজ বর্ষায় রোপণের ফলে বন্যা ও অতি বৃষ্টিতে প্রায়ই নষ্ট হয় সবজিক্ষেত। একই জমিতে বারবার বীজ রোপণ করতে হয় কৃষকদের। ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ে কয়েকগুণ। তবে যারা আগাম ফসল উৎপাদন করে ও মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে তাদের তারা ফসল বিক্রি করে তুলনামূলক লাভবান হতে পারেন।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, পরিত্যক্ত ও বাড়ির আশেপাশে খালি জায়গায় সবজি চাষের কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যার ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর সবজি চাষের সংখ্যাও বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে কৃষকরা বিভিন্ন হাইব্রিড বীজগুলোই বেছে নেন।