অপহরণের পর সায়েম নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে কুমিল্লার দেবিদ্বারের গুনাইঘর উত্তর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলমকে আটক করেছে পুলিশ। একই অভিযোগে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের ছেলে মামুন পলাতক রয়েছেন।
সোমবার রাতে উপজেলার আটক করে পুলিশ। তবে তার ছেলে মামুন পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে। নিহত সায়েম উপজেলার গুনাইঘর উত্তর ইউপির চাষারপাড় গ্রামের আবদুর রহিম সরকারের ছেলে। আবু সায়েমের দুই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহত আবু সায়েমের শ্বশুর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ছিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে আমার মেয়ের জামাই সায়েমকে অপহরণ করে চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমের ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ৭-৮ জন সন্ত্রাসী। অপহরণের খবর পেয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজাখুঁজি করি। এক পর্যায়ে বিকেল ৫টার দিকে খোরশেদ চেয়ারম্যান আমাকে ফোনে জানায়, সায়েম তার ছেলে মামুনের কাছে আছে। মামুন আমার জামাইয়ের কাছে যৌথ ব্যবসার যে টাকা পাবে সে টাকা ফেরত দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
পরে রাত সাড়ে ৭টার দিকে চেয়ারম্যান খোরশেদ আমাকে যাত্রাবাড়ির বাবুবাজার এলাকার একটি বাসায় সায়েমের সঙ্গে দেখা করায়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় মঙ্গলবার সকালে চেয়ারম্যানের বাড়িতে লেনদেনের বিষয়টি মীমাংসা করা হবে। সায়েমকে আমার সঙ্গে নিতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন ‘সায়েম তার জিম্মায় থাকবে’। সেখান থেকে তারা রাতেই সায়েমকে নিয়ে প্রাইভেটকারে দেবিদ্বার চলে আসে। প্রাইভেটকারে জায়গা না থাকায় আমি বাসে করে দেবিদ্বারে রওয়ানা হই। আমি কুমিল্লা ময়নামতি এলাকায় আসার পর রাত সাড়ে ১০টায় চেয়ারম্যান আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, সায়েম চা খাওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে পালিয়ে গেছে। পরে রাত সোয়া ১টার দিকে চেয়ারম্যান আবার ফোনে জানায় সায়েম খুবই অসুস্থ, তাকে আমি ও আমার স্ত্রী দেবিদ্বার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, তুমি দ্রুত হাসপাতালে আসো। পরে আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি সায়েমের লাশ নিচে পড়ে আছে। লাশের চোখ-মুখ ফোলা, গলায় ও পিঠে অসংখ্য দাগ। পরে আমি থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে খোরশেদ চেয়ারম্যানকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
সায়েমের ছোট ভাই আবু কাউছার সরকার জানান, গত কয়েক বছর আগে ব্যবসায়ী কাজে টাকার প্রয়োজন হলে সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমের ছেলে মামুনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে যৌথ ব্যবসায় পার্টনার করে সায়েম ভাই। বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা কিছুটা অবনতি হলে ওই টাকার জন্য মামুন আমার ভাইকে চাপ সৃষ্টি করলে তাকে ৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয় এবং বাকি টাকার জন্য একটি খালি চেক দেওয়া হয়। পরে মামুন ওই চেক দিয়ে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা করে।
ওই মামলা চলমান থাকাবস্থায় মামুন ও তার বাবা আমার ভাইকে সন্ত্রাসী দিয়ে অপহরণ করে। রাতে সায়েম ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলেন আমার পিকআপভ্যানটি মামুনকে দিয়ে দিলে তাকে ছেড়ে দেবে। এই কথা শুনে আমি পিকআপভ্যানটি মামুনকে দিয়ে দেই। এরপরও আমার ভাইকে চেয়ারম্যান ও তার ছেলেসহ সন্ত্রাসী দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। আমরা এ ঘটনায় খোরশেদ চেয়ারম্যান ও তার ছেলের ফাঁসি দাবি করছি।
দেবিদ্বার থানার ওসি মো. নয়ন মিয়া বলেন, নিহত সায়েমের স্বজনরা থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম থানা পুলিশের হেফাজতে আছেন। সায়েমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মামলা হলে চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার দেখানো হবে।